বিশেষ রাজনৈতিক সংবাদদাতা : উত্তর কলকাতার নতুন জেলা সভাপতিকে নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল ছেড়ে আসা কাউকে কেন উত্তর কলকাতার মতো দলের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হল তা নিয়ে আদি বিজেপি নেতা—কর্মীরা দলের অন্দরেই তাঁদের অসন্তোষের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ায় কল্যাণ চৌবেকে উত্তর কলকাতার সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁকে দলের রাজ্য কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করেছে বিজেপি। এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
অন্যদিকে, উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তমোঘ্ন ঘোষকে। তমোঘ্ন, তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা তথা উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সচিব তথা মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট তপন ঘোষের একমাত্র ছেলে। চিরকালই তমোঘ্ন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ছিলেন। বছর দেড়েক আগে বিজেপিতে গিয়েছেন। তবে তপন ঘোষ এখনও সুদীপবাবুর সঙ্গেই আছেন। গেরুয়া শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, উত্তর কলকাতায় কী বিজেপির পুরনো কোনও নেতা ছিলেন না সভাপতি পদের যোগ্য? তমোঘ্নকে জেলা সভাপতি করার বিষয়টি ঘোষণা হওয়ার পরই সেভ বেঙ্গল বিজেপির তরফে একটি টুইট করে বলা হয়েছে, ‘হয় সুকান্ত মজুমদার আত্মসমর্পন করেছেন অথবা তিনি অযোগ্য, কীভাবে একজন তৃতীয় শ্রেণির তৃণমূল নেতাকে বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলার সভাপতি করা হয়। আসল বিজেপির কি কেউ ছিল না?’
উত্তর কলকাতার বাসিন্দা রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘কল্যাণ চৌবে থেকে শুরু করে শিবাজী সিংহ রায় এবং বর্তমানে তমোঘ্ন ঘোষ প্রত্যেকেরই তৃণমূল যোগ ছিল।’’ উত্তর কলকাতায় বিজেপির সভাপতি হওয়ার মতো একাধিক যোগ্য নেতা ছিলেন। কাউন্সিলর বিজয় ওঝা, মীনাদেবী পুরোহিতদের মতো দলের পুরনো নেতা—নেত্রীরা রয়েছেন। তাঁরা উত্তর কলকাতার সভাপতির দৌড়ে ছিলেন। আবার প্রাক্তন সভাপতি দীনেশ পান্ডেকে ফের সভাপতি করার পক্ষে ছিলেন জেলায় দলের একাংশ।
আরও পড়ুন: নিশানায় সুদীপ: কেন বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়েছিলেন, প্রশ্ন তাপসের
অন্যদিকে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজল ঘোষ সভাপতি হওয়ার দৌড়ে সবার আগে ছিলেন। গত ৮ মাসে শুধু কাউন্সিলর নয়, বিজেপি নেতা হিসাবেও সাধারণ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে একটা আলাদা লড়াকু ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন সজল। স্বভাবতই তাঁকে সামনে রেখে উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে দলকে চাঙ্গা করা হতে পারে বলে মনে করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের একাংশ। আর সেক্ষেত্রে সরাসরি প্রবীণ তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সজল ঘোষের লড়াইটাও জমজমাট হত। কিন্তু সকলকে বাদ দিয়ে তমোঘ্ন ঘোষকে কোন অঙ্কে সভাপতি করা হল তা নিয়েই প্রশ্ন আদি বিজেপি নেতাদের। যদিও গেরুয়া শিবিরের একাংশের কথায়, তমোঘ্নকে সভাপতি করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীই দলের কাছে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
Leave a Reply