নিউজ ডেস্কঃ বেঁচে থাকার জন্য আমরা নিজেদের বন্ধুদের মাংস খেয়েছি। এই কাজের জন্য আমরা মোটেও অনুতপ্ত নই। এ কথা শোনার পর যে কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষেই এ ঘটনা মেনে নেওয়া বেশ কঠিন। একই সঙ্গে পুরো ঘটনা জানার পর তাঁরাও ভাববেন এ ছাড়া আর কী ই বা করার ছিল। এই ঘটনা জানতে হলে আমাদের পঞ্চাশ বছর পেছিয়ে যেতে হবে।
১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর, উরুগুয়ে এয়ারফোর্সের এক চাটার্ড বিমানে(ফ্লাইট ৫৭১) রাগবি খেলোয়াড়দের এক দল তাদের পরিবারের সঙ্গে চিলি যাচ্ছিল। আন্দিজ পর্বতের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় খারাপ আবহাওয়ার জন্য দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমান। ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে ২৯ জনের মৃত্যু হয়। পরে তুষারধসে পড়ে আরও ১৩ জন হতভাগ্য বিমানযাত্রীর মৃত্যু হয়। এত কিছুর পরেও বেঁচে থাকেন ১৬ জন।
বিমান দুর্ঘটনা বা তুষারধস থেকে বেঁচে গেলেও তারপর থেকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে তাঁরা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। দিন কয়েকের মধ্যেই ফুরিয়ে যায় খাবার। নিদারুণ খিদে নিয়ে কতদিন বাঁচা যায়? এদিকে উদ্ধারকারীদের কোনও দেখা নেই।
ক্রমশ, বেঁচে থাকা সেই ১৬ জন মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে এনে দাঁড় করায় অনাহার। কেউ কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। এক সময় ডাক্তারি পড়ুয়া রবার্তো ক্যানেসা সবার সামনে সেই ভয়ঙ্কর প্রস্তাব দেয়। ক্যানেসা বলে, বেঁচে থাকতে হলে আমাদের মৃত সঙ্গীদের মাংসই খেতে হবে। সবাই চুপ। কেউ হ্যাঁও বলছেন না, আবার জোর দিয়ে নাও বলতে পারছেন না। সবার মনের কথা বুঝতে পেরে ক্যানেসাই প্রথমে এগিয়ে আসে। ভাঙ্গা বোতলের কাঁচ যোগাড় করে তা দিয়ে সে মৃতদেহের মাংস কেটে আনে। সেই শুরু… তারপর যতদিন তাঁরা ওই অবস্থায় ছিলেন, ততদিন মৃত মানুষের দেহাংশ খেয়েই বেঁচে ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা সবাই ঠিক করেন , তাঁদের মধ্যেও যদি কেউ মারা যান তাহলে তাঁদের মাংসও বেঁচে থাকা সঙ্গীরা খাবেন। এই ভাবেই তাঁরা বহু দিন বেঁচে ছিলেন। সেই সময়টাও নেহাত কম নয়। বাহাত্তর দিন। বাহাত্তর দিন পর ২৩ ডিসেম্বর তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছিল।
সেই ঘটনার কথা আজও মনে পড়ে রোমান সাবেল্লার। তিনি জানিয়েছেন, মৃত সঙ্গীদের মাংস ছিঁড়ে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল যেমন ভয়ঙ্কর তেমনই নৃশংস। তবুও আমাদের তাই করতে হয়েছিল। এরপর ১৯৭২ এর ২৩ ডিসেম্বর উদ্ধারকারী দল হেলিকপ্টার থেকে তাঁদের দেখতে পায়, শুরু হয় উদ্ধার কাজ।
আন্দাজ পর্বতের সেই দুর্ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছে বই। পিয়ার্স পলের লেখা সেই বিয়ের নাম, ‘অ্যালাইভঃ দ্যা স্টোরি অব আন্দিজ সার্ভাইভার’। এই ঘটনা নিয়ে ১৯৯৩ সালে সিনেমাও তৈরি হয় হলিউডে। তবে, বেঁচে থাকার তাগিদে নরমাংস খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এক সার্ভাইভার কিছুটা মজাও করেছেন। তাঁর মতে, মৃত্যুর পর দেহদান করে যাওয়া সেই সময় থেকেই চালু হয়েছিল।
Leave a Reply