ডেস্ক : রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল। সম্ভাবনা তালিকা মেনেই মমতার মন্ত্রিসভায় ৮ টি নতুন মুখ।
মুখ্যমন্ত্রী কথামতোই তৃণমূলের মন্ত্রী শিবিরে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাধন পান্ডে এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দফতরগুলি সামলাতে দলের এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সাধন পান্ডে মারা গিয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। তাঁদের দফতরগুলো প্রায় খালি পড়ে রয়েছে। আমার পক্ষে এতগুলো দফতর দেখা সম্ভব নয়। তাই আমরা মন্ত্রিসভায় একটা ছোট রদবদল করছি।’’
এই রদবদলে নতুন মন্ত্রী হলেন অনেকে।
আসুন জেনে নিন…
বাবুল সুপ্রিয় : ২০১৪ সালে আচমকাই রাজ্য রাজনীতিতে নাটকীয় এন্ট্রি । বাবা রামদেবের সুপারিশে আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট পান। প্রথম বারেই তৃণমূলের প্রার্থী দোলা সেনকে পরাজিত করে সাংসদ হন। প্রথম বার জিতেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী মুনমুন সেনকে হারিয়ে দ্বিতীয় বার আসানসোলের সাংসদ হন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদও বহাল।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাবুল টালিগঞ্জে দাঁড়িয়ে হেরে যান অরূপ বিশ্বাসের কাছে। কিছুদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয় বাবুলকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর পর প্রকাশ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজনীতি ছাড়ার কথা জানান। তবে সবাইকে কার্যত চমকে দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল। পরে বালিগঞ্জের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সু্ব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর সেখানে উপনির্বাচন ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে বিধায়ক হন বাবুল।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
উদয়ন গুহ : বামফ্রন্ট আমলে কৃষিমন্ত্রী কমল গুহর ছেলে উদয়ন বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। কমল বামফ্রন্টের শরিক দল ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে দীর্ঘদিন দিনহাটার বিধায়ক ছিলেন। উদয়নেরও রাজনীতিতে হাতেখড়ি সেই ফরোয়ার্ড ব্লক দিয়েই। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ফরোয়ার্ড ব্লকের হয়ে দিনহাটায় প্রথম প্রার্থী হন উদয়ন। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী অশোক মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন।
২০১৬ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান। সেই বছরেই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে দিনহাটা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ, প্রায় ২১ হাজার ভোটে। ২০২১ সালে তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। সেই নির্বাচনে নিশীথের কাছে ৫৭ ভোটে হেরে যান তিনি। তবে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশে নিজের সাংসদ পদ রাখতে নিশীথ বিধায়ক পদ ছেড়ে দিলে দিনহাটায় উপনির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে জিতে তৃতীয়বারের জন্য বিধায়ক হন উদয়ন।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
স্নেহাশিস চক্রবর্তী : স্নেহাশিস হুগলি জেলার রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। ২০১১ সালে প্রথমবার জাঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জিতওছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে ওই একই কেন্দ্রে পর পর তিন বার জিতে স্নেহাশিস নিজের উপর দলের আস্থা বাড়িয়েছেন।
২০২১ সালে স্নেহাশিসকে তৃণমূলের শ্রীরামপুর লোকসভার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক রদবদলে শ্রীরামপুর এবং হুগলি— দুই সাংগঠনিক জেলা মিশিয়ে একটি সাংগঠনিক জেলা করার পর স্নেহাশিসকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
পার্থ ভৌমিক : তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজনীতির পরিচিত মুখ। মুকুল রায়ের ‘অতি-ঘনিষ্ঠ’ নেতা হিসাবে খ্যাতি। এক সময়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও হন। পরে ২০১১ সালে নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বারের জন্য বিধায়ক হন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাছেরলোক’ বলেও নামডাক।
পর পর তিন বার নৈহাটি থেকে জিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পরিষদীয় দলের সচিব পদও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
প্রদীপ মজুমদার : বঙ্গ রাজনীতিতে প্রথম দিকে দেখা না গেলেও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রদীপ মজুমদার, দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী হন তৃণমূল সুপ্রিমোর হাত ধরে। তবে, সেবার তিনি পরাজিত হন।২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে আবার ওই একই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়। তবে এ বার আর নিরাশ হননি প্রদীপ। ভোটে জেতার পর দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক হন। রাজ্যের কৃষি দফতরের অন্যতম প্রধান হিসেবেও পরিচিত তিনি।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
বীরবাহা হাঁসদা : সাঁওতালি চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা কম নয়। হানসদা এআইটিসির প্রার্থী হয়ে ঝাড়গ্রাম (বিধানসভা কেন্দ্র) থেকে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বন বিভাগ দফতরের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং ঝাড়গ্রাম আসনের বিধানসভার সদস্য।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
বিপ্লব রায়চৌধুরী : আদি তৃণমূলের সদস্য। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সুনামে জনপ্রিয়। ষাটের দশকের শেষে মেদিনীপুর জেলা থেকে বিপ্লবের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ১৯৬৮-’৬৯ নাগাদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির হাত ধরে ছাত্র পরিষদের সদস্য হন এই বর্ষীয়ান নেতা। ১৯৯৬ সালে কোলাঘাট কেন্দ্র থেকে প্রথমবার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন বিপ্লব। চার বারের বিধায়ক বিপ্লব ১৯৯৮ সালে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আগমন। ২০০১ সালেও ভোটে জিতে বিধায়ক হন। কিন্তু, ২০০৬ সালে হেরে যান। তবে ২০১১ সালে বিধানসভায় প্রত্যাবর্তন। ২০১৬ সালে পাঁশকুড়া পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে আবার পরাজিত। জিতে ফেরেন ২০২১ সালে।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
তাজমুল হোসেন : মালদহের হরিশচন্দ্রপুর থেকে দু’বারের বিধায়ক তাজমুও প্রাক্তন ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা। ২০১১ সালে ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হিসাবে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হন তাজমুল। বিরোধী শিবিরের নেতা হিসাবে তৃণমূল সরকারের বিরোধিতা করলেও ২০১৬ সালে দূরত্ব সরিয়ে তৃণমূলে যোগ।
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে হরিশচন্দ্রপুরের তাজমুল পরাজিত হন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে হরিশচন্দ্রপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েই জিতে বিধানসভায় ফেরেন তাজমুল।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
সত্যজিৎ বর্মণ : রাজ্যের মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর প্রতিমন্ত্রী হলেন সত্যজিৎ বর্মণ। চল্লিশের কোঠা পার করা তৃণমূল নেতা সত্যজিতের বাংলার রাজনীতিতে আগমন ২০০১ সালে। প্রথম জীবনে কংগ্রেসের সদস্য হলেও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রায়গঞ্জ ২ নম্বর ব্লক থেকে জিতে উত্তর কর্মাধ্যক্ষ হন বিশ্বজিৎ।
বর্তমানে রায়গঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমলের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ ২০২১ সালে হেমতাবাদ কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হন।
বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ।
Leave a Reply