পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি– গত কয়েক বছরে ভারত, আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঋণ দিয়েছে। সেই অঙ্কটা প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। আফগানিস্তানের পর ফের আরও একবার সেই ঋণ ডুবতে বসেছে আফ্রিকায়? মাহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ জানিয়ে দিয়েছে, তারা ঋণ শোধ করতে পারবে না।
আফগানিস্তানে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভারত প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল। ভারতের তরফে তৈরি করা হয়েছিল বেশ কিছু স্থায়ী সম্পদ। কিন্তু ২০২১ সালে তালিবান কাবুল দখল করার পরেই, রাজনৈতিক পালা পাল্টে যায়। আফগানিস্তানের ঋণ ফেরতের আশা চলে যায় বিশ বাঁও জলে।
আফগানিস্তানসহ, আফ্রিকা, সাউথ আমেরিকা, সেন্ট্রাল এশিয়ার বেশ কিছু দেশে মোট ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরর ঋণ দিয়েছে। আর সবকটি ঋণইLoC বা লাইন অফ ক্রেডিটে। অর্থাৎ, দীর্ঘমেয়াদী স্তরে অত্যন্ত কম সুদে এই ঋণ দেওয়া হয়। সুদ তখন থেকেই গোনা শুরু হয়, যখন কাজ শুরু হয়। এই ঋণ খরচ হয়, মূলত পরিকাঠামো স্তরে, যেমন পাকা সড়ক, বিদ্যুত, কৃষি ও স্বাস্থ্যক্ষেত্র ইত্যাদি।
এই লাইন অফ ক্রেডিটের আরও একটি সুবিধা হল, ঋণ যে দেশ দিয়ে থাকে, পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে সেই দেশই মূল দায়িত্বে থাকে। চিন যে পলিসিতে একের পর এক দেশকে ঋণ দিয়েছে এবং তারাই তাদের পরিকাঠামো গড়ে দিয়েছে, ঠিক তেমনই পথ নিতে শুরু করেছিল ভারত।
কিন্তু আফগানিস্তানের পর, ফের একবার বিপাকে পড়তে চলেছে ভারতের ঋণ নীতি! আফ্রিকার একটি দেশ রয়েছে, গাম্বিয়া, তার সংসদ ভবন তৈরি করেছে ভারত। জাম্বিয়াতেও বেশ কিছু হাইডেল পাওয়ার প্রকল্প করছে ভারত। এমন আফ্রিকার কয়েকটি দেশে সম্পদ গড়েছে ভারত।
এখন প্রশ্ন, আচমকা ভারত আফ্রিকার পরিকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগী কেন হল? আসল কারণ, বিশ্বের মধ্যে একমাত্র আফ্রিকা সেই মহাদেশ, যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ সেভাবে পা ফেলেনি। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার খাতিরে ভারতও দখল জমাতে চাইছে আফ্রিকায়।
আরব সাগর লাগোয়া, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, যেমন ইথিয়োপিয়া, সোমালিয়া, মোজাম্বি, ম্যাডাগাসকার, মরিশাসের ঘাড় নিঃশ্বাস ফেলছে চিন। এরই কাউন্টার করতে, আফ্রিকার কিছু দেশের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ভারত।
এ ছাড়া, আরও একটি বড় কারণ হল, আগামী দিনে, যদি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যের পদ পেতে গেলে আফ্রিকার ভূমিকাও বড় হয়ে দেখা দেবে। আফ্রিকা মহাদেশেই ৫৪টি অফিসিয়াল স্বাধীন দেশ রয়েছে। ফলে, দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক দিক মাথায় রেখেই, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে ঋণ দিয়েছে ভারত।
হালের বিশ্ববাজারের চিত্র যদি দেখা যায়, তাহলে বোঝা যাবে, আমেরিকা, ব্রিটেনের পাশাপাশি ইউরোপের তাবড় দেশগুলি আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ছে। হালেই শ্রীলঙ্কাও দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তানেও আর্থিক মন্দা তৈরি হয়েছে। এমনকী চিনের ব্যাঙ্কগুলিও ভালো ভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে আফ্রিকার দেশগুলিও ধুঁকছে।
আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে জানিয়েছে, তারা ভারতের ঋণ শোধ করতে পারবে না। পরিবর্তে তারা, তেল, গ্যাস এবং লিথিয়াম খনির ব্যবহারে অনুমোদন দেবে। এবার একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে চিনের পথ ধরে ভারতও কি ঋণের ফাঁদ তৈরি করেছে? উত্তর হল না। কারণ, যদি কোনও দেশে, বিমানবন্দর, জলপথবন্দর, পরিকাঠামো তৈরির পর সেগুলি দখল করে তাহলে, সেটাকে ঋণের ফাঁদ বলা যেতে পারে। কিন্তু এখানে ভারতের তরফে একটি বার্তাও দেওয়া হয়নি।
ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ডিল দেখা যাচ্ছে, যাখানে ঋণের বদলে কোনও দেশ খনিজ সম্পদ দিতে রাজি। আগামী দিনে ভারত, তেল আমদানি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তেলচালিত পরিবহণের পরিবর্তে, ব্যাটারি চালিত পরিবহণ প্রস্তুতেও জোর দেওয়া হচ্ছে। সেখানে লিথিয়ামের বাজার ভারত ধরতে পারলে আগামী দিনে জ্যাকপট আসতে চলেছে বলাই যায়।
Leave a Reply