নিউজ ডেস্ক: শ্রদ্ধা ওয়াকার-আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। প্রেম-সম্পর্ক-লিভ ইন-বিয়ে। বর্তমান সময়ে সমাজের বহু পরিচিত-প্রচলিত প্রথা। ভালোবাসার মোড়কে কঠিন বাস্তবকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকা। জীবন যুদ্ধে একসঙ্গে এগোনোর প্রতিশ্রুতি করে থাকেন অনেকেই। সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনও অনেকে, আবার প্রতিশ্রুতি ভেঙে নতুন শুরু করেনও বহু মানুষ। ঠিক যেমনটা করতে পারতেন শ্রদ্ধা-আফতাব। কিন্তু, সম্পর্ক ধরে না রাখতে পেরে একে অপরকে খুন করা, খুন করে ভালোবাসার মানুষটির মৃত দেহ টুকরো-টুকরো করে কেটে নিজের ঘরে ফ্রিজের মধ্যে রাখার ঘটনা, যথেষ্ট ভয়াবহ। কেন এই পরিণতি পেল দুই মানুষের ভালোবাসা? কেন প্রেমিকের হাতে টুকরো-টুকরো হল প্রেমিকার নিথর দেহ?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পেতে তদন্তে নেমে পুলিশ পেল খুনি প্রেমিক আফতাবের বারবার বয়ান বদল, ঠান্ডা মাথায় পুলিশ ও তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা, ‘মার্ডার ওয়েপন’ না পাওয়া, খুনের পরও আফতাবের সঙ্গে একাধিক মহিলার সম্পর্ক, পর্যাপ্ত সাক্ষী না থাকা, আফতাবের নার্কো টেস্টের দাবি, পুলিশের বদলে তদন্তে সিবিআই আনা।
এদিকে, ইতিমধ্যেই নাগাড়ে জেরার মুখে শ্রদ্ধাকে খুনের কথা স্বীকার করে সে। সম্পূর্ণ নির্বিকার ভাবে জানায় কী ভাবে এই নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েছিল। যা শুনে হতবাক তদন্তকারীরা। হাড়হিম করা সেই ঘটনার বর্ণনা আফতাব নিজেই দিয়েছে পুলিশকে।
লৌহ কঠিন মানসিকতা এবং বিন্দুমাত্র চোখের পলক না ফেলে আফতাব পুলিশকে জানায়,
পুলিশ– শ্রদ্ধাকে কেন খুন করেছো?
আফতাব– `১৮ মে রাতে শ্রদ্ধার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়। সেদিন পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে চলে গিয়েছিল। আমাদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে গিয়েছিল। তারপর আমি শ্রদ্ধাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম। ওঁর বুকের উপর বসে গলা টিপে শ্বাসরোধ করেছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওঁর দম বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ– শ্রদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে কী করেছিলে?
আফতাব– সেদিন রাতে শ্রদ্ধার দেহ টেনে নিয়ে বাথরুমে ফেলে রেখেছিলাম। গোটা রাত বাথরুমেই ফেলে রেখেছিলাম শ্রদ্ধার দেহ।
পুলিশ– কখন, কী ভাবে মৃতদেহের টুকরো করেছিলে?
আফতাব– ১৯ মে আমি বাজারে যাই। স্থানীয় বাজার থেকে ৩০০ লিটারের একটি ফ্রিজ কিনি। তারপর একটি দোকান থেকে একটি করাত কিনি। ওই করাত দিয়েই সেদিন রাতে বাথরুমে বসে শ্রদ্ধার মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলি। আমি কিছুদিন রাঁধুনী হিসেবে চাকরি করেছি। সেই সময় চিকেন আর মটন কাটার ট্রেনিং পাই। যা আমার কাজকে আরও সহজ করে দেয়। শ্রদ্ধাকে ছোট ছোট টুকরোয় কেটে রাসায়নিক দিয়ে ধুয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম।
পুলিশ– মৃতদেহের টুকরোগুলো নিয়ে এরপর কী করলে?
আফতাব– ২০ মে শ্রদ্ধার লাশের কয়েকটি টুকরো ফ্রিজ থেকে বের করে ব্যাগে ভরেছিলাম। অল্প কয়েকটা টুকরো ব্যাগে ভরে রাতে বেরিয়ে মেহরৌলির জঙ্গলে ফেলে এসেছিলাম। কেউ দেখে ফেললে মুশকিলে পড়ে যেতাম, তাই প্রথম রাতে অল্প কয়েকটা টুকরো নিয়েই বেরিয়েছিলাম।
পুলিশ– কতদিনে গোটা মৃত দেহ ঘর থেকে বের করেছিলে?
আফতাব– ঠিক মনে নেই। কমপক্ষে ২০ দিন সময় লেগেছিল, হয়তো।
পুলিশ– এতদিন ধরে মৃতদেহের টুকরো ঘরে রেখে কী করছিলে?
আফতাব– আমি ঘর থেকে বেরতাম না। কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গেও দেখা করতাম না। ফ্রিজ খুলে নীচের তাক থেকে টুকরোগুলো উপরের তাকে রাখতাম আবার সেগুলোর জায়গা বদল করতাম। যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। কেমিক্যাল দিয়ে ঘর, বাথরুম পরিষ্কার করতাম। ঘরে যাতে কোনওভাবেই মৃতদেহে কোনও ট্রেস না পাওয়া যায়। শ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলতাম। রাগ হলে ওর মাথা ফ্রিজ থেকে বার করে এনে চড় মারতাম। আবার কখনও কখনও ওকে মেকআপও করিয়ে দিতাম।
পুলিশ– যাঁকে এত ভালোবাসলে, তাঁকে এমন ভাবে হত্যা করলে কেন?
আফতাব– আমার রাগ হয়েছিল। প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলাম। রাগের মাথায় আমি শ্রদ্ধাকে মেরে ফেলেছি। কিন্তু, এই খুনের ঘটনা কাউকে জানাতে চাইনি। শ্রদ্ধার পরিবারের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না। আমি জানতাম ওঁ মরে গেলেও কেউ খুঁজতে আসবে না। তাই আমার যা মনে হয়েছিল তাই করেছি।
আফতাবের সঙ্গে কথোপকথনের পরেও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জট ছাড়াতে পুলিশকেও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। এখনও পুলিশের হাতে আসেনি অনেক প্রমাণ। কিন্তু কোন পথে এগোচ্ছে শ্রদ্ধা খুনের তদন্ত প্রক্রিয়া?
পুলিশ জানায়, সংসার কী করে চলবে এবং সংসারের খরচ কে টানবেন সেই নিয়েই সমস্ত ঝগড়ার সূত্রপাত। তবে অনেকক্ষেত্রে এখনও জট কাটেনি। তাই এই জট কাটাতে বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর নার্কো টেস্টের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।
এর আগে পুলিশ জানিয়েছে, শ্রদ্ধাকে খুনের মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁকে নিয়ে মুম্বই থেকে দিল্লিতে এসে উঠেছিলেন আফতাব। তদন্তকারীদের দাবি, শ্রদ্ধাকে খুনের পর পরই নিত্যনতুন মহিলাসঙ্গীদের নিয়ে ছতরপুরের ভাড়াটে ফ্ল্যাটে ঢুকতেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও গড়তেন বলেও নাকি পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। সে সময় শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলি ফ্রিজ়ারে থেকে সরিয়ে আলমারিতে রেখে দিতেন এমনটাই দাবি করে আফতাব।
Leave a Reply