ইউ এন লাইভ নিউজ: মনের সুপ্ত ইচ্ছা পূরণ করতে অনেক তীর্থস্থানের ভক্তরা ‘মানত’ করেন। মহাতীর্থ কালীঘাটও এরমধ্যে অন্যতম। কালীঘাটে এসে কেউ কেউ ‘মানত’ করে কেউ আবার ঢিল বেঁধে চলে যায় মন্দিরের আশপাশে। ধর্মীয় আবেগ ও আরাধ্যর প্রতি গভীর বিশ্বাসের টানেই এমন চল। তবে এবার এই লৌকিক বিশ্বাস ও ধর্মীয় আবেগ নিয়ে কালীঘাট মন্দিরের উলটোদিকের মিলন সংঘের এবছরের অভিনব ও নজরকাড়া শারদ ভাবনা ‘মানতপুরী’। লক্ষাধিক ছোট ছোট পাথরের টুকরো ও মিনি পিতলের ঘণ্টা, লাল বেনারসির টুকরো পাশাপাশি সাড়ে পাঁচ হাজার বাল্বের আলো ঝলমল আকাশছোঁয়া মণ্ডপ। কালীঘাট মন্দির থেকে বেরিয়ে ঠিক উলটো দিকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢুকে পঞ্চাশ ফুট এগোলেই বাঁদিকে বাঁশ ও মানত করার সামগ্রী দিয়েই রয়েছে পর পর গেট। প্রতিটি গেটেই দেখবেন অজস্র ঢিল ও ছোট ছোট ঘণ্টা যেমন ঝুলছে, তেমনই রয়েছে সিঁদুর চুপড়ি, শাঁখা-পলা, মঙ্গলঘট, কুলো, চালনের মতো অজস্র পুজোর উপকরণ। রয়েছে কনেবউয়ের মাথার লাল টুকটুকে অজস্র ছোট ওড়না। প্রায় দেড়শো মিটার প্রবেশপথের দুপাশেও একইভাবে ভক্তের ভগবানের কাছে আর্তি জানিয়ে ‘মানত’ চিহ্ন ফুটে উঠেছে। বালুরঘাটের আমতলি, ও নবদ্বীপের শিল্পীদের নিয়ে প্রায় দুমাস ধরে এই বর্ণময় পূজা মণ্ডপ তৈরি করেছেন রাজনারায়ণ সাহা চৌধুরি।
একচালা প্রতিমা চিরন্তন বাঙালির মাতৃআরাধনার ভাব ও ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেবে প্রতিমা দর্শনার্থীদের। নির্মাণশিল্পী রাজনারায়ণ বহু বছর ধরে উত্তরবঙ্গের হিলি, রায়গঞ্জ, ময়নাগুড়ির অনেক বিখ্যাত পুজোর মণ্ডপ গড়লেও এই প্রথম কলকাতায় পা দিয়ে শারদভাবনা ফুটিয়ে তুলেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, নানা মাপের বিশেষ ধরনের সাড়ে ছয় হাজার বাঁশ সেই বালুরঘাট থেকে নিয়ে এসেছেন। নদিয়া, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর থেকে পুজোর নানা উপকরণ সংগ্রহ করে ৬৫ ফুট উচু এই বর্ণময় মণ্ডপে ব্যবহার করেছেন। প্রতিমা গড়ছেন কালীঘাট পটুয়াপাড়ার প্রখ্যাত শিল্পী দীপেন মণ্ডল। জোরকদমে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতিতে নজরদারি করার ফাঁকে পুজোর সাধারণ সম্পাদক কার্তিক জানালেন, “মণ্ডপে পা রাখলে মনে হবে এক পুরাতনী ঐতিহ্যে ঘেরা দেবী মহামায়ার জাগ্রত মন্দিরে এসেছেন। যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত মানত করছেন। ভক্তের সেই মনোবাসনা পূরণ করে চলেছেন ভগবান। আপনারাও আসুন, আপনাদেরও মানত পূরণ করবেন দেবী দশভুজা।”
Leave a Reply