ফিচার ডেস্ক: স্বর্গের রেল-সেতু। চেনাব ব্রিজ, যার আরেক নাম চন্দ্রভাগা ব্রিজ। ঠিক যেন মেঘের দেশে খিলান। বিশ্বের উচ্চতম রেলওয়ে ব্রিজ যা ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বজুড়ে এক অনন্য নজির গড়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের রেসি জেলার বাক্কাল ও কুরির মধ্যে একটি ইস্পাত এবং কংক্রিট খিলান (আর্চ) যুক্ত রেল-সেতুই হল চেনাব সেতু।
কাশ্মীর উপত্যকাকে জোড়া হচ্ছে জম্মু রেলস্টেশনে সঙ্গে এবং সেখান থেকে দেশের অন্যান্য রাজ্যে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঠিক ততটাই চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্ট হল এই উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক প্রজেক্ট। ভারতীয় রেল আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে এই প্রকল্প চালুর ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। ২৭২ কিমি এই রেল পথ দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে কাশ্মীরকে যেমন একদিকে জুড়ে দেবে, তেমনই কৌশলগত দিক থেকেও ভারত এগিয়ে থাকবে।
১৯৯৫ সালে উধমপুর থেকে কাটরা ২৫ কিমি রেল পথের অনুমোদন হয়। ১৯৯৯ সালে কাজীগুন্ড থেকে বারামুলা ১১৮ কিমি রেল পথের অনুমোদন হয়। ওই একই বছরে কাটরা থেকে কাজীগুন্ড অবধি ১৯৯ কিমি রেল পথের অনুমোদন হয়। এই প্রকল্প জম্মু-কাশ্মীরের একাধিক উপত্যকাকে যুক্ত করছে। ২০০২ সালে এই প্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়। যা স্বাধীনতার পরে ভারতীয় রেলের কাছে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি প্রকল্প।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৩৮’টি টানেল। যা সব মিলিয়ে ১১৯ কিমি।ভারতীয় রেলের সবচেয়ে বড় টানেল প্রায় ১২.৭৭ কিমি এই রেলপথের অন্তর্গত। ৯২৭টি সেতু আছে এই প্রকল্পে। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঐতিহাসিক চেনাব ব্রিজ। যা বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম রেল সেতু।
২০১৭ সালের নভেম্বরেই এই আর্চ ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ করার অনুমতি পায়। যা ২০২১ সালের এপ্রিলেই শেষ করে দেয় ভারতীয় রেলওয়ে। মেঘের ওপর খিলান (আর্চ) আকৃতির এই সেতু কম বিস্ময়কর নয়। চেনাব নদীর উপর নির্মিত এই রেলওয়ে আর্চ ব্রিজটির উচ্চতা ৩৫৯ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ১,৩১৫ মিটার। এই রেলওয়ে আর্চ ব্রিজটির বিশেষত্ব হল এর উচ্চতা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার বেশি। এর পাশাপাশি এই সেতুর উচ্চতা চিনের বেপান নদীর ওপর নির্মিত ডুগ সেতুর উচ্চতার চেয়েও বেশি।
কেন নজরকাড়া চেনাব ব্রিজ?
মোট ১৭ টি পিলার রয়েছে। ১৪৮৪ কোটি টাকার ইস্পাত ব্যবহার হয়েছে এই সেতু তৈরিতে। রেল সূত্রে খবর, প্রায় ২৮ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে এই সেতু। যে কোনও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ব্রিজ। ঝড়, বরফ, ভূমিকম্প, কোনও আঁচ আসবে না এই ব্রিজের গায়ে বলছেন রেলের কর্তারা। হিমাঙ্কের নীচে তামমাত্রা নেমে গেলেও কোনও সমস্যা হবে না এই ব্রিজের গঠনে। মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা নেমে গেলেও কোনও ভাবে সংকুচিত হবে না এই ব্রিজে ব্যবহার করা ইস্পাত। ২৬৬ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইলেও কোনও সমস্যা হবে না এই ব্রিজে। ভূমিকম্পেও এই ব্রিজের কোনও ক্ষতি হবে না বলে জানাচ্ছেন নির্মাতারা। দু’দিক দিয়ে ইস্পাতের আর্চে জোড়া এই ব্রিজ দিয়ে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে বলে দাবি। এর আগে এত উচ্চতায় এরকম ব্রিজ তৈরি করতে পারেনি কোনও দেশই। এর আগে এত উচ্চতা বিশিষ্ট রেল সুড়ঙ্গ তৈরি হয়নি। এই রেলপথের কাজ শেষ হলে সরাসরি ট্রেনে চেপে দিল্লি থেকে শ্রীনগর যেতে আর কোনও বাধা থাকবে না সমগ্র দেশবাসীর।
Leave a Reply