ইউ এন লাইভ নিউজ: অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা বজায় রাখলেও, সর্বভারতীয় কংগ্রেস আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা তাকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের একটি অংশ বলে মনে করে। মিডিয়ার প্রশ্নের জবাবে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হাইকমান্ড নেবে, অধীর চৌধুরী নয়। খানিকটা সুরে চড়িয়ে খড়্গে বলেন, ‘‘হয় হাইকমান্ডের কথা মানতে হবে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে, না হলে বাইরে যেতে হবে।’’
এর প্রতিক্রিয়ায় অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘‘আমিও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। আমিও হাইকমান্ডেরই লোক!’’ অর্থাৎ এটি ইঙ্গিত দেয় যে অধীর নিজেকে খড়্গের সাথে নিজেকে সমানভাবে প্রতিস্থাপন করছেন। অধীরের বক্তব্যের পর কংগ্রেস সভাপতি বা হাইকমান্ড কোনও ব্যবস্থা নেবেন কিনা সেটাই দেখার।
শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে খড়গে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন। বাইরে থেকে সমর্থন কোনও নতুন বিষয় নয়। প্রথম ইউপিএ সরকারে বামেরাও বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও মমতার আরও একটি বিবৃতি এসেছে। যাতে স্পষ্ট যে, তিনি ‘ইন্ডিয়া’য় আছেন এবং সরকার গঠিত হলে তিনি তাতে শামিল হবেন।’’
গত বুধবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়, মমতা বলেছিলেন, “ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সব রকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব। যাতে বাংলায় আমার মা-বোনেদের ১০০ দিনের কাজে কোনও দিন অসুবিধা না-হয়।’’ এর অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে তৃণমূল কংগ্রেস ‘ভারত’ সরকারকে এতে যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে সমর্থন করবে, রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেবে। যদিও বৃহস্পতিবার তমলুকে এক জনসভায় মমতা স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া লেভেলে (সর্বভারতীয় স্তরে) আমরা বিরোধী জোট ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলাম। আমরা জোটে থাকব। অনেকে আমায় ভুল বুঝেছে। আমি ওই জোটে আছি। আমিই ওই জোট তৈরি করেছি। আমি জোটে থাকবও। এখানকার সিপিএম নেই। এখানকার কংগ্রেস নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে আমরা জোটে থাকব। ভুল বোঝাবুঝির কোনও জায়গা নেই। ভুল খবর ছড়িয়েছে। এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে।’’
মমতা জোর দিয়েছিলেন যে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটের সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই, তবে এটি সর্বভারতীয় স্তরে প্রযোজ্য নয়। মমতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘উনি জোট থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। ওঁর কোনও কথায় আমি ভরসা করি না। এখন দেখছেন হাওয়া বদলাচ্ছে। তাই এ দিকে ভিড়তে চাইছেন। বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী দেখলে ও দিকে যাবেন।’’
সেই প্রসঙ্গে অধীরকে রীতিমতো তিরস্কার করে খড়্গে বলেন ‘‘অধীর চৌধুরী ঠিক করার কেউ নন। কী হবে তা ঠিক করার জন্য আমরা রয়েছি। কংগ্রেস পার্টি রয়েছে। হাইকমান্ড রয়েছে।’’ আরও স্পষ্ট করে খড়গে বলেন, ‘‘হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। হয় সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে, না হলে বাইরে চলে যেতে হবে।’’ খর্গের মন্তব্যের পরে, অধীরের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা মন্তব্য করেছেন, ‘‘একটা লোক কংগ্রেস পার্টিকে বাঁচাতে বাংলায় সব আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে। আর কেউ কেউ হাইকমান্ডের নাম করে বাংলা থেকে কংগ্রেসকে তুলে দেওয়ার ইজারা নিয়ে রেখেছেন।’’ এরপর অধীর স্বয়ং নিজে বলেন তিনিও হাই কমান্ডেরই লোক।
এদিকে, অধীরের প্রতি খড়্গের মন্তব্যকে ঘিরে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। সোশ্যাল মিডিয়ায়, তৃণমূলের আইটি বাহিনী লেখা শুরু করেছে, ‘‘যে অধীরকে তাঁর সভাপতি রাস্তা দেখে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন, সেই অধীরের কথার কোনও মূল্য নেই। আসলে কংগ্রেস হাইকমান্ডও জানে, বাংলায় বিজেপি-বিরোধী একমাত্র শক্তি তৃণমূলই।’’
Leave a Reply