স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনি নীরবে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। মুখ ফুটে কিছু বলেন নি। শচীন তেন্ডুলকর সামলাতে পারেননি। সরে গিয়েছিলেন। মুখে কিছু বলেননি। রাহুল দ্রাবিড় হঠাৎ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ আজও বলেননি। কিন্তু এটাই বলে দিলেন ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল সদ্য টেস্ট দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া অধিনায়ক জো রুট।
স্বীকার করে নিয়েছেন, নেতার দায়িত্ব শুষে নিয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। প্রভাব ফেলেছিল, তাঁর পারিবারিক জীবনে। তাই তিনি দায়িত্ব থেকে সরে যান।
১৬ এপ্রিল রুট ইংল্যান্ড টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। ততদিনে তিনি ৬৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারমধ্যে ২৪ টি ম্যাচ জিতেছিলেন। ইংল্যান্ডের কোনও টেস্ট অধিনায়কের এই নজির নেই।
কিন্তু রুটের নেতৃত্বেই ইংল্যান্ড শেষ ১৭ টি টেস্ট একটি মাত্র জিতেছিল। অ্যাশেজ সিরিজ ০-৪ ম্যাচে হারার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ০-১ ম্যাচে হেরে গিয়েছিল। সেইসময় রুটকে সরানোর জোরালো দাবি ওঠে। দলের অলরাউন্ডার বেন স্টোকস এখন নেতা।
রুট বলেছেন: ” শেষ কয়েকটি বছর, আমার জীবনকে শুষে নিচ্ছিল এই চাপ। যে সিধ্যান্ত নিয়েছি , তা সকলের জন্য ভালোই হয়েছে। আমার ব্যাক্তি জীবনেও যা কাজে লেগেছে। একটা সময় এসেছিল, সিরিজ খেলে বাড়ি ফিরে আসতাম। কিন্তু ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারতাম না। পরিবারের সকলের সঙ্গে বাড়িতে থাকাটাও উপভোগ করতে পারতাম না।”
তিনি বুঝতে পারছিলেন, আমি যেমন হতে চাই – তার ছায়া হয়েই ছিলাম। সময়টাকে বুঝতে হবে, আর সকলের কথা বুঝে সরে যেতে হবে। কাউকে সেই সম্মান সামলাতে সুযোগ দেওয়া ভালো।”
এই সব কথা রুট বলেছেন, দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় পডকাস্ট আড্ডা দিতে দিতে বলেছেন।
” ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আমি মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার। ইংল্যান্ড ফিরে এসেই নুতন করে ভাবনা চিন্তা শুরু করি। আজ আমি খুব খুশি যে, সঠিক সিধ্যান্ত নিতে পেরেছিলাম। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম। আলাদা করে বেনের সঙ্গে কথা বলি। সে আমার সহ অধিনায়ক ছিল। এই দলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু সে। এরপর পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলে অমন সিধ্যান্তটি নিয়েছিলাম। বুকের উপর থেকে চাপটা সরে গিয়েছিল।”
২০২১ সালটি রুটের কাছে স্মরণীয়। অধিনায়ক হয়ে, ১৫ টি ম্যাচে ১৭০৮ রান করেছিলেন। তারমধ্যে ৬ টি সেঞ্চুরি ছিল। তিনি টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে, তিন নম্বর ক্রিকেটার যিনি এক ক্যালেন্ডার বছরে – ১৭০০ রানের বেশি করেছিলেন। এমন নজির আছে পাকিস্তানের মহম্মদ ইউসুফের আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিভিয়ান রিচার্ডসের।
এর আগের সব নেতাদের মত বলেননি রুট । অন্য সুরে বলেছেন: ” দেশের হয়ে ব্যাট করতে নেমে আমি নেতৃত্ব নিয়ে ভাবতামই না। ভুলেই যেতাম এই দলের নেতা আমি। আমি সব ছেড়ে শুধু লাল বলটি নিয়ে ভাবতাম। ওটাকেই দেখতাম। যত বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতাম, নিরবিছিন্নভাবে শান্তি পেতাম। আর মাথার মধ্যে অনেক কম চিন্তা ভাবনা থাকতো। যা করতাম তাতে বুঁদ হয়ে থাকতাম।”
এসব শুনে মনে হয়, দেশের ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব এক মারাত্মক চাপের খেলা। এখনকার ভারতীয় দলের নেতা রোহিত শর্মা কি সেই চাপের স্বীকার! কোহলি কি নেতৃত্ব ছেড়ে স্বস্তিতে? সময় হয়তো এসবের উত্তর দেবে।
Leave a Reply