নিউজ ডেস্ক: ৫০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস সমৃদ্ধ ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি। কলকাতার বউবাজারে, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে অবস্থিত এই কালী মন্দির। এত বছরের পুরোনো মন্দিরে কাহিনি রয়েছে অনেক। কেন এই মন্দিরের নাম ‘ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি’, মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কিভাবে- এই তথ্য অনেকের কাছেই হয়ত অজানা।
নামকরণ
ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে মা কালীকে পুজো করা হয় ‘শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানি’ নামে। আবার এই মন্দিরের কালীমূর্তি ‘ফিরিঙ্গি কালী’ নামেও পরিচিত। শোনা যায়, এই মন্দিরে একসময় নিয়মিত পুজো দিতে আসতেন, পর্তুগিজ বংশের কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। তিনি, হিন্দু ধর্মের অনুগামী ছিলেন। এই মন্দিরে বহু বছর তিনি মাকে পুজো দিতেন। সেই থেকেই, লোকমুখে এই মন্দিরের কালীমূর্তির নাম হয় ‘ফিরিঙ্গি কালী’। পাশাপাশি মন্দিরের নাম হয়ে ওঠে ‘ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি’।
আরও পড়ুন: কালীঘাট মন্দির: কথিত আছে, সতীর আঙ্গুল পড়েছিল এখানেই
স্থাপনের ইতিহাস
কথিত আছে, ৫০০ বছরের পুরোনো এই মন্দির। কিন্তু, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠার সঠিক সময়কাল, বা কে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা জানা যায়না। তবে শোনা যায়, ১৪৩৭ সালে ভাগীরথী নদীর কাছেই শ্মশানের মধ্যে মাটির কালীমূর্তির প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার আগে সেই জঙ্গলবেষ্টিত এলাকায় ছিল শিব ও শীতলার মন্দির। দেখা যায়, মন্দিরের সামনের দেওয়ালে লেখা রয়েছে “ওঁ শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানি/ স্থাপিত ৯০৫ সাল, ফিরিঙ্গি কালী মন্দির”- এই সূত্র থেকেই অনুমান করা হয় ফিরিঙ্গি কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ৯০৫ বঙ্গাব্দে।
ফিরিঙ্গি কালী মন্দিরের পুজো
১৮২০ সাল থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত এই মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন শ্ৰীমন্ত পন্ডিত। তিনি নিঃসন্তান হওয়ায়, ১৮৮০ সালে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ৬০ টাকার বিনিময় তিনি মন্দির বিক্রি করে দেন পোলবার বন্দোপাধ্যায় পরিবারের শশীভূষণ বন্দোপাধ্যায়কে। ২০২২ সালেও ওই বন্দোপাধ্যায় পরিবারই মন্দিরের সেবায়েত। ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কালীমূর্তিটি মাটির তৈরি। মূর্তি উচ্চতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা। মায়ের চোখ ত্রিনয়নী। কালীমূর্তি ছাড়াও এই মন্দিরে রয়েছে শীতলা, মনসা, শিব, দুর্গা ও নারায়ণের মূর্তি। প্রতি অমাবস্যায় মন্দিরে কালীপুজো হয়। কালীপুজোর দিন হাজার ভক্তের ভিড় দেখা যায় ইতিহাসবাহী এই ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে।
Leave a Reply