নিউজ ডেস্ক: ‘পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বাগ্গা / আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক…. ’ না, চোখে পড়ছে না ঘুড়ির ঝাঁক। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকাল থেকেই মেঘ আর রোদ যেন চোর পুলিশ খেলছে। কখনও শ্লেট কালো মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে রোদ। কখনো রোদ্দুরকে ঢেকে দিচ্ছে কালো মেঘ। ঝির ঝির, ঝম ঝম বৃষ্টি এসে ধুয়ে দিচ্ছে বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দ। তাই কি মন খারাপ অন্তুর!
ঘড়ির কাঁটা ধরে এগোচ্ছে সময়। বাড়ছে অপেক্ষা। মেঘ কাটলেই ঘুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বে ও। ঘুড়ি আর সুতো নিয়ে অন্তু ভাবছিল ওর বাবার কথা।
অন্তুর বাবার ছিল ঘুড়ির ব্যবসা। বাবা ঘুড়ি তৈরি করত। ছোট্ট অন্তু তখন বাবার পাশে বসে দেখত ঘুড়ি বানানো। অন্তুকে পাশে বসিয়ে ঘুড়ি বানাতে বানাতেই ওর বাবা গল্প বলেছিল ঘুড়ির।
১৮৫৬ সাল। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের লখনউ শহরের রাজত্ব খুইয়ে, ইংরেজদের গভীর চক্রান্তের শিকার হলেন ওয়াজেদ আলি শাহ। তাঁকে ছাড়তে হল লখনউ শহর। তাঁর বজরা এসে ঠেকল কলকাতার বিচালিঘাটে। এরপর তিনি মেটিয়াবুরুজ এলাকায় গড়ে তুললেন তাঁর নতুন নবাবিয়ানা। তিনি শুধু একাই এলেন না কলকাতায়। নিয়ে এলেন সেখানকার পুরনো রীতি-রেওয়াজও। কলকাতাও সেগুলো আপন করে নিল নিজের মতো করে। লখনউ শহরের ঘুড়ি র লড়াই ধীরে ধারে জায়গা নিতে শুরু করল কলকাতার আকাশে।
ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরেই কলকাতার আকাশে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি দেখা যেতে শুরু করল। কানকাওয়া, চং, তুলকুল, ইত্যাদি সে সব ঘুড়ি র কত নাম। অন্যদিকে কলকাতায় তখন উঁকি দিচ্ছে বাবু কালচার। ফুর্তি করার জন্য, নিজেদের প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামলেন কলকাতার বাবুরাও। কলকাতার বাবু কালচার ক্রমেই রপ্ত করতে শুরু করল নবাবিয়ানার সেই সব রীতিনীতি। আর সেগুলোই দিন দিন অভ্যাস হয়ে উঠল।
সেই থেকে আজও চলে আসছে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই রেওয়াজ। সময় পাল্টেছে। পাল্টেছে শহরের চেহারা। মাঠ হারিয়ে, ছাদ হারিয়ে শহর সেজেছে কংক্রিটের জঙ্গল আর বহুতেলর ভিড়ে। সেখানে সময় এবং জায়গা বড় কম। আকাশ ছেড়ে ঘুড়ি জায়গা করে নিয়েছে গানে-গল্পে। ঝাঁ চকচকে শহরে আকাশে দু-একটি দিনই যেন আকাশে দেখা মেলে সেই ঘুড়ি র। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আকাশ ছেয়ে যায় ঘুড়ি তে। শুধু বিশ্বকর্মা পুজোই নয় কোথাও কোথাও সরস্বতী পুজোর দিনও আকাশ মাতায় লাল-নীল-সবুজ ঘুড়ি ।
সেই ঘুড়ি র ব্যবসায় এখন মন্দা। অন্তুর বাবাকে কেড়ে নিয়েছে করোনা। তাও যখন ঘুড়ি ওড়ে তখন ক্লাস সিক্সে পড়া অন্তু দেখে ঘুড়ি নয়, ওর বাবার স্বপ্ন উড়ছে আকাশে।
Leave a Reply