ডেস্ক- না এটি কোনও সিনেমার সেট নয়, পুরোদস্তুর মানুষদের বাসযোগ্য এলাকা ছিল। অথচ এখন পুরোপুরি যেন অদ্ভুতুড়ে ভৌতিক এলাকা। একবার কল্পনা করুন। বিদ্যুত নেই, পানীয় জল নেই, আগাছা সরিয়ে তৈরি করা গলিপথই এক মাত্র রাস্তা। আঁধার নামলে, এই এলাকা ঠিক কোন সভ্যতায় নিয়ে যায়, সেটা ভেবেই বুক কেঁপে ওঠে।
চিনের সাংঘাই শহর থেকে পুবে একটি দ্বীপ রয়েছে। তার নাম সেংশান। সেই দ্বীপের একটি ছোট্ট গ্রাম হাওতোয়ান। এখানেই এক সময় ছিল ২ হাজার মৎস্যজীবীদের বাস ছিল। আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও প্রায় ৪০০ দ্বীপ।
৯০–এর দশকে অতি দ্রুত খালি হয়ে গেল এই দ্বীপ। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হল। এলাকার বহু বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে উঠল। ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করল আগাছা আর জঙ্গল। রূপ নিল ভৌতিক এলাকার।
একের পর এক ছোট বড়, একতলা দোতলা বাড়িগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে, হাঁ করে। চারপাশে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আর জঙ্গলে বিষধর শ্বাপদদের আনাগোনা। এখানে পৌঁছনো যত কঠিন, বেরনো তার থেকেও বেশি কঠিন। বলা ভালো, কার্যত দ্বীপান্তের রাজ্য।
৯০–এর দশকে চিন সরকার একটি অভিযান চালায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি নেয়। কিন্তু এই এলাকা এতোটাই সমস্যাবহুল ছিল যে, গ্রামবাসীদের শহরের দিকে নিয়ে আসা হয়। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে আসে। কিছু মানুষ পুরনো জায়গার মায়া কাটাতে পারেননি, তারা শহরে ফিরলেও, পুরনো জায়গার প্রতি টান রেখেই দিয়েছিল।
২০০২ সালে পুরো এলাকা সরকারের তরফে খালি করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে এই দ্বীপ।
তারও প্রায় এক দশক পর, কিছু অত্যুৎসাহী পর্যটক এই দ্বীপে ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দেয়। ছবি বের হয়, ইন্টারনেটে। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে ওঠে এই দ্বীপ। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। অন্যদিকে, দেশী, বিদেশী পর্যটকেরাও ভিড় জমাতে শুরু করে।
এর পরেই, সরকারের তরফে নয়া উদ্যোগ শুরু হয়। দ্বীপটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হয়। যদিও, আমেজটিকে পুরোপুরি অক্ষত রাখা হয়েছে। ৮ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই দ্বীপে প্রবেশ করা যায়। চাইলে কেউ রাতও কাটাতে পারেন, তার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে থাকারও।
তবে প্রশাসনের তরফে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে, পুরনো বাড়িগুলিতে যথেচ্ছ ভাবে প্রবেশ করা যাবে না। কারণ, বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। ফলে পায়ে হেঁটে পুরো এলাকা ঘুরে দেখাই যায়। আর হারিয়ে যাওয়া যায় অন্য জগতে।
Leave a Reply