অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের আত্মহত্যায় উঠছে প্রশ্ন, তদন্ত কমিটি গঠন সরকারের

নিউজ ডেস্ক: পূর্ব বর্ধমানের দেবীপুর রাজবাগান এলাকার ছাত্রছাত্রীদের ‘ভগবান’ শিক্ষক সুনীল দাস। ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছানোর জন্য বহু কাজ করেছেন তিনি। টাকার অভাবে বন্ধ হতে দেননি এলাকার কারোর পড়াশোনা। কিন্তু তাঁরই সংসারেই আর্থিক অনটন। পরিবারের অভিযোগ, অবসরের পর থেকেই মেলেনি পেনশন। অবসাদে দিন কাটাচ্ছিলেন শিক্ষারত্ন সুনীল দাস। এরপরই মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ।

কলকাতার হেয়ার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষকের আত্মহত্যার ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা। সকলের সাহায্যের জন্য যিনি সবার আগে এগিয়ে যেতেন, সেই সুনীল স্যারের এই মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারছেননা কেউই। সুনীল দাসের স্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বাড়িতে অশান্তি না থাকলেও ছিল অভাব। পেনশন না পেয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সুনীল দাস। অনেক চেষ্টা করেও পেনশনের টাকা পাননি ৬৩ বছর বয়সী সুনীল দাস’।

গত ৩ বছর ধরে সুনীল দাসের পেনশনের বিষয়টি সরকারের নজর এড়িয়ে গেলেও, তাঁর আত্মহত্যার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো সিস্টেমকে। সুনীল দাসের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে সমগ্র ঘটনার তদন্তের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারি ও তার অধীনে দুইজন সদস্যের একটি কমিটি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি আহত এবং মর্মাহত।’

এছাড়াও বুধবার দুপুরে টেট চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন সুনীল দাস। সেই বছরেই সেপ্টেম্বরে শিক্ষারত্ন পুরস্কার দেওয়ার ৬ দিন পরেই সুনীল দাসের বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। তবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তার আপৎকালীন পেনশন চালু করা হয়। যদিও ফাইনাল রিপোর্ট দেখা হয়নি। ইতিমধ্যেই তদন্তের স্বার্থে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

২০১৯ সালে কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন পূর্ব বর্ধমানের সুনীল স্যার। তার কর্মজীবনে বহু স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে শিক্ষারত্ন দ্বারা সম্মানিত করা হয় তাঁকে। অভিযোগ উঠেছে, সম্মান পেলেও অবসর গ্রহণের পর মেলেনি প্রাপ্য পেনশন। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩ বছর, সংসারে অভাবের সঙ্গেই তার জীবনে যোগ হয় হতাশা। সেই অবসাদেই অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সুনীল দাস।