ভারতের এই সেই জায়গা, যেখানে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন শ্রীরামের সেবক হনুমান

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি– ভারতের অন্যতম মহাকাব্য অখণ্ড রামায়ণ পড়েছেন হয়তো অনেক কম লোক। কিন্তু এই মহাকাব্যের নাম শোনেননি এমন মানুষ ভূ ভারতে নেই বললেই চলে।

আর এই মহাকাব্য মানেই, বিখ্যাত কয়েকটি চরিত্রকে ভুলে যাওয়ার নয়, তার মধ্যে অন্যতম হনুমান। আর রেমসেতুর অন্যতম স্থান ধনুষকোটি, নামটি হয়তো এখনও অনেকের কাছে অজানা।

শ্রীরামচন্দ্র ভক্ত হনুমান। ভারতের যতগুলি ধারার রামায়ণ রয়েছে প্রত্যেকটিতে হনুমানকে অকৃতদার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ হনুমান কোনওদিন বিয়ে করেননি। তাহলে? হনুমানের স্ত্রী এলো কোথা থেকে? আর রামসেতুর সঙ্গে হনুমানের বিয়ের পর্ব জুড়ল কীভাবে? আর ধনুষকোটি নামকরণ কীভাবে হয়ে উঠল? এর উত্তরে রয়েছে কিছু রহস্য ও পৌরাণিক যুক্তি।

আগে দেখে নেওয়া যাক, ধনুষকোটি বা ধনুষকোডির ইতিহাসকে, তারপর পৌরাণিক কাহিনি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তামিলনাড়ুর পূর্বে বঙ্গপোসাগর ও আরব সাগরের বুক চিরে সিংহল অধুনা শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছনোর একটি রাস্তা খুঁজে পায় ব্রিটিশরা।

পথটির মাঝে ছিল একটি দ্বীপের মতো অংশ। তামিলনাড়ুর থেকে সেই দ্বীপ পর্যন্ত তারা দুটি রাস্তা বানায়। ছিল রেলপথ ও সড়কপথ। একটি ছোটখাটো শহরও তৈরি হয়, ছিল স্কুল, ডাকঘর, চার্চ ও আবাসন।

১৯৬৪ সালের বিভৎস সামুদ্রিক ঝড়ে দ্বীপ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলস্তর বাড়ার ফলে জলের তলায় চলে যায় ধনুষকোডি। অথচ ইংরেজ শাসনকালে, এই ধনুষকোডি থেকে ফেরিতে শ্রীলঙ্কায় যাতায়াত করা যেত।

ঝড়ের দুদিন পর উদ্ধারকর্মীরা ধনুষকোটিতে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু খালি হাতে ফিরে আসেন। সেখানে কোনও দ্বীপ ছিল না। সবটাই ছিল জলের তলায়। ধনুষকোডিতে সেই সময় বাস করতো প্রায় ২ হাজার মানুষ। কারও কোনও চিহ্ন মেলেনি। বেশ কেক বছর পর, সেই দ্বীপ আবার উঠে আসে। দেখা মেলে ব্রিটিশ আমলের নিদর্শনের কঙ্কালসার দেহ।

এবার দেখি পৌরাণিক কাহিনিতে কী গল্প লুকিয়ে আছে। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার সময়ই লঙ্কায় পৌঁছনোর আগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এই জলপথ। শুরু হয় বানর সেনার অসম লড়াই। নির্মাণ করা হয়, রামসেতু। আর এখানেই আসে এক কাহিনি। রামসেতু নির্মাণের সময়ই বড় সমস্যা দাঁড়াচ্ছিল। কেউ যেন এসে ভেঙে দিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে হনুমান।

একদিন, সেতু নির্মাণের পর, ক্লান্ত বানর সেনা যখন বিশ্রাম নিচ্ছে, সেই সময় পুরো সেতু পাহারা দিলেন হনুমান। জলের শব্দতরঙ্গে বুঝতে পারলেন বিপদ আসছে, এক লাফে জলের তলায় ডুব দিয়ে ধরলেন এক মৎস্যকন্যাকে। অপরূপ সুন্দরী, তেমন ক্ষিপ্র, হনুমানকে দেখে বিদ্যুতের বেগে পালানোর চেষ্টা করেন।

কিন্তু হনুমানের ক্ষিপ্র গতির কাছে হার মানেন তিনি। হনুমান তাঁকে ধরে করে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জলদেবী, ভগবান শ্রীরামের নামে সেতু নির্মাণ হচ্ছে, মাতা সীতাকে উদ্ধারের জন্য। কেন বাধা দিচ্ছেন বারবার?

মৎস্যকন্যা তাঁকে বলেন, আমিই ভাঙছিলাম, আমার নাম সুবর্ণামৎস্য। আগে আমার কাছে হার স্বীকার করো। নয়তো, এই সেতু আবার ভেঙে দেবো। আপনারা লঙ্কায় যেতেই পারবেন না।

হনুমান উত্তর দেয়, আমি ভগবান শ্রীরাম ছাড়া কারও কাছে হার স্বীকার করি না। তাই এ ছাড়া আর কী শর্ত রয়েছে? আমি স্ত্রীলোকের সঙ্গে যুদ্ধ করিনা।

সুবর্ণমৎস্য বললেন, একমাত্র উপায় তুমি আমাকে বিয়ে করো। আমি তোমার প্রেমপ্রার্থী। হনুমান প্রতিশ্রুতি মতো তাঁকে বিবাহ করে বললেন, এই সেতু নির্মাণে কোনও শত্রু শক্তি যেন আসতে না পারে, সে ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে।

সুবর্ণমৎস্যা প্রতিশ্রুতি দিলেন, এটি আমার এলাকা। তোমরা নির্ভয়ে সেতু নির্মাণ করো। তবে সেতুর কাঠামো যেন, তোমার ভগবানের ধনুকের মতো যেন হয়। এর পরেই, হনুমানের নির্দেশে রামসেতু ধনুকের আকারে নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে রামসেতুর জায়গার নাম হয় ধনুষকোটি অনেকে ধনুষকোডিও বলে থাকেন। অর্থাত ধনুকের শেষ অংশ।