দীপঙ্কর গুহ: অস্ট্রেলিয়াতে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি এখন এক বিস্ময়। কোনও দিন এর আগে সেই দেশে খেলেনই নি তিনি। প্রথমবার সেই দেশে পা রেখে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন “স্কাই” (SKY)। সূর্য কুমার যাদব (Surya Kumar Yadav)। সেই ভারতীয় ব্যাটারটি কোনও ম্যাচের শেষে সেদেশে বলেছেন, তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিংকে কপি করেন। হ্যাঁ, তিনি এবি ফ্যান। আর খোদ এবি কি বলছেন? তিনি বলছেন, ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিংই শেষ কথা নয় – সূর্য এরপর আরও কিছু করে দেখবেন।
গোটা ক্রিকেট দুনিয়া “সফল সূর্য”কে আরও ভালো করে জানতে চাইছে। কতো কিছু আজ জানাও যাচ্ছে ! দলের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় কোনও দিন আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি খেলেননি। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু টি টোয়েন্টি আই পি এল লিগে খেলেছেন। সেই রাহুল বলছেন ‘মাঠের ধরে বসে যা দেখছি তা অবিশ্বাস্য’। মারকুটে অজি ব্যাটার শেন ওয়াটসনে মতে, গোটা বিশ্বে এ এক বিরল প্রতিভা। প্রতিদিনই “স্কাই” এর নামে যুক্ত হচ্ছে নতুন সব প্রশংসা বিশেষণ।
আইসিসি ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ৫ টি ম্যাচ খেলে ৭৫ গড় ধরে রেখে করেছেন ২২৫ রান। কিন্তু রান সংগ্রহের চেয়ে বেশি নজর কেড়ে চলেছেন রান তোলার তোলার স্টাইলে। উইকেটের নেচার, ওয়েদার কন্ডিশন বা বিপক্ষ বোলার যেমনই হোক, প্রায় প্রতি বলে রান তোলার উপায় ঠিকই বের করে ফেলছেন সূর্যকুমার।
ড্রাইভ, পুলে, হুক – এসব আর তাঁর কাছে দেখতে অভ্যস্থ নয়। তাঁর ভান্ডারে প্রথাগত সব শট খেলার মতো মশলা তো আছেই, দেখা মিলছে “নয়া” স্টাইলের শটও। উইকেটের চার ধারে বৃত্তাকারে ব্যাটিং করে রানও তুলে চলেছেন নিয়মিতভাবে। যার প্রতিফলন তাঁর স্ট্রাইক রেটে। এবারের বিশ্বকাপে ১১৬ বল খেলেছেন, তাতে সূর্যকুমারের স্ট্রাইক রেট ১৯৩.৯৬!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩টি ইনিংসে পঞ্চাশ রানের ইনিংস খেলেছেন চার নম্বরে ব্যাট করে। তারই মধ্যে, দুটি ম্যাচে – তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলি ম্যাচের সেরা। তবুও সূর্য খবরের শিরোনামে!
ম্যাচ অনুযায়ী, স্কাই এরই মধ্যে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২৫ বলে ৫১ রান , দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪০ বলে ৬৮ রানের পর জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে খেলেন ২৫ বলে ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ওভার বাউন্ডারি মারেন ৪টি। তারই একটি ছিল, প্রায় অফের দিকে ষষ্ঠ স্টাম্পের লাইনে গিয়ে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা ! কেউ কেউ বলছেন : ৩২ বছর বয়সী সূর্যকুমারের এই শট ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সেরই মতো। উইকেটের চারপাশে খেলার দক্ষতার কারণে যাঁকে বলা হয়ে এসেছে – “৩৬০ ডিগ্রি” ব্যাটার।
ম্যাচ শেষে ধারাভাষ্যের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠান এই নামটাই মনে করিয়ে দেন সূর্যকুমারকে। ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে তুলনার কথা শুনে সূর্যকুমার জবাব দেন বিনয়ের সুরে, ” বিশ্বে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিং করতে পারে এমন একজনই আছে। আমি তার মতো খেলার চেষ্টা করি।’ নিপাট বিনয়।
ভারতের সাড়া জাগানো, মিডল অর্ডার ব্যাটারের এমন মন্তব্য নজরে পড়ে ডি ভিলিয়ার্সের। চার বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। সুপার -১২ শেষ ম্যাচের পর স্বয়ং প্রোটিয়া ব্যাটারটি সূর্যকুমারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে টুইট করেছেন , “তুমিও দ্রুতই সেদিকে (৩৬০ ডিগ্রি ক্রিকেটার) যাচ্ছ। এমনকি এর চেয়েও বেশি। আজ দারুণ খেলেছ।” সেমিফাইনালের আগে এটাই কি স্কাইয়ের মোটিভেশনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে? সময় বলবে।
Leave a Reply