দীপঙ্কর গুহ: একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। ভারতীয় দলের সহ অধিনায়ক অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস খেললেন। মাঠের বাইরে ডাগ আউটে বসে থাকা হেড কোচ হাততালি দিলেন না! এমন ঘটনা ঘটলো ভারত – দক্ষিণ আফ্রিকা টি টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে। ৫৬ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত ছিলেন দলের সহ নেতা কে এল রাহুল। আর হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় সেই ইনিংস দেখে হাততালি দিলেন না! ইচ্ছে করে? নাকি মনে ছিল না? যেটাই হোক, ভারত তিন ম্যাচের হোম সিরিজ শুরু করেছে জয় দিয়ে। তিরুবন্তপুরমে বুধবার ভারত ২০ বল বাকি থাকতে, ৮ উইকেটে সহজেই হারাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
আসলে এই মাঠের নাম গ্রীনপার্ক সত্যি মানানসই ছিল ম্যাচের দিন। ড্রোন ক্যামেরার ছবি , বুঝতেই দিচ্ছিল না – মাঠের কোথায় ২২ গজের উইকেটটি। পুরোটাই ঘাসে ভরা সবুজ মাঠ! ব্যাট করে যাওয়া কঠিন ছিল। তাই রাহুল সমালোচিত হলেন প্রবলভাবে। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ১০৬ রানে থেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের ইনিংস। গ্রিন পার্কের পিচ বড্ড গ্রিন ছিল। এমন পিচেই ভারতীয় সিমাররা বেজায় বেকায়দায় ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে মাঠে সিরিজ জয়ের পর প্রোটিয়াজদের বিপক্ষে সিরিজটিও জয় দিয়ে শুরু করল ভারত। প্ৰথম তিন ওভারের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেট খুইয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থতার রেকর্ড গড়া দল মরিয়া লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিল। অমন কঠিন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কোনওরকমে ১০৬ তুলেছিল স্কোরবোর্ডে। এই ম্যাচে খেলানো হয়নি হার্দিক পান্ডিয়া এবং ভুবনেশ্বর কুমারকে। সেই জায়গায় ভারত প্ৰথম একাদশে রেখেছিল ঋষভ পন্থ এবং আর্শদীপ সিংকে। আর সেই লেফট আর্ম পেসার আর্শদীপ সিংয়ের দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকা খেই হারিয়ে ফেলে। সঙ্গী দীপক চাহারও ছিলেন ভীতির কারন।
ম্যাচের প্ৰথম ওভারে দীপক চাহারের বলে দলের নেতা তেম্বা বাভুমার বোল্ড হওয়া দিয়ে বিপর্যয় শুরু। তারপরের ওভারে আর্শদীপের সুইংয়ে খেই খুঁজে পায়নি প্রোটিয়াজরা। একই ওভারে তিনি ফেরান ডি’কক, রিলি রসৌ আর ডেভিড মিলারকে। তিন নম্বর ওভারে স্ট্যাবসকে চাহার ফিরিয়ে দেওয়ার পর প্রোটিয়াজ শিবিরে লজ্জার আতঙ্ক তাড়া করতে থাকে। সেই অবস্থা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় মারক্রামের ২৪ বলে ২৪ রানে ভর করে। মারক্রামের পর ওয়েন পার্নেল (৩৭ বলে ২৪) এবং কেশব মহারাজ (৩৫ বলে ৪১) কোনওরকমে দলের স্কোর ১০০ রান টপকে দেন।
এই রান ভারত তাড়া করতে নেমে শুরুতে চাপের মুখে পড়ে কাঁপন ধরেছিল ভারতীয় শিবিরে। কারন দলের দুই স্তম্ভ রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলিকে খুইয়ে বসা। দুই ম্যাচ উইনার আউট হয়ে যেতে ভারতের ২ উইকেটে ১৭ রান হয়ে যায়। পরের জুটিতে এমন কঠিন চ্যালেঞ্জিং বাইশ গজের উইকেটে সূর্যকুমার যাদব এবং কেএল রাহুলের ৯৩ রানের পার্টনারশিপ ভারতকে সহজে জয় এনে দেয়। দু-জনেই জোড়া হাফসেঞ্চুরি করেন। যে পিচে রাহুল রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, সেখানেই উল্টোদিক থেকে সূর্যকুমার ৩৩ বলে ৫০ রানের ইনিংসটি খেলে দেন। তিনটে ছক্কা, পাঁচ বাউন্ডারিতে সাজান ইনিংসটি ।
অন্যপ্রান্তে উইকেট আগলে কেএল রাহুলকে ব্যাট করতে দেখা যায় অনেকটাই সংযতভাবে। রাহুলের শুরুটা ছিল এক্কেবারে বেমানান। ৩১ বলে ১৪ রান করতে না করতেই, শুরু হয়েছিল বেজায় সমালোচনা। কিন্তু শেষমেষ ৫১ রান করতে নিলেন ৫৬টি বল। চারটে ছক্কা এবং জোড়া বাউন্ডারিতে সাজানো রাহুলের ইনিংস। এমন ইনিংস খেলে রাহুল নিজে বলেছেন: ” আমি যত ম্যাচে ব্যাট করেছি, এটি ছিল সবচেয়ে কঠিন পিচ”। সেটা শোনার আগেই রাহুলের ইনিংসটি টি টোয়েন্টি নয় – টেস্ট ম্যাচের , এমনটা লেখা শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে। সূর্যকুমার যাদব এখন স্বপ্নের ফর্মে আছেন। আর দুটো মাস এই ফর্ম ধরে রাখলে টিম ইন্ডিয়া টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে আরও মশগুল হতেই পারে।
ভারত: ১১০/২ ; দক্ষিণ আফ্রিকা: ১০৬/৮
ম্যাচের সেরা: আর্শদীপ সিং
ম্যাচের ফল : ভারত ৮ উইকেটে জয়ী
Leave a Reply