শাশ্বত দাশ: আত্মনির্ভর ভারতের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেই তথাকথিত ডাকে সাড়া দিয়ে এবার আমেরিকার গুগল ম্যাপকে টক্কর দেবে ভারতের ন্যাভিক ম্যাপ। ২০১৮ সালের এই পরিকল্পনায় অবশেষে আশার আলো দেখছে ভারত। বিশ্বযুদ্ধের অশনি সঙ্কেতের যুগে বিশ্ব-রাজনীতিতে নিজের ছাপ ফেলতে অনেকটাই বদ্ধপরিকর ভারত সরকার। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে দেশের সাধারণ মানুষদের পরিষেবা দেওয়া, সবক্ষেত্রেই এখন ভারতের মূলমন্ত্র অনেকটা স্বদেশী আন্দোলনের মত। বিশ্বের প্রথমসারির দেশ গুলির মধ্যে উন্নতির দৌড়ে এগিয়ে থাকাই এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। আর সেই উদ্দেশ্যেই আমেরিকার গুগল ম্যাপকে টেক্কা দিতে মাঠে নেমেছে ন্যাভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কন্সোলেশন।
কী এই ন্যাভিক ম্যাপ?
ন্যাভিক হল ন্যাভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কন্সোলেশন অনেকটা আমেরিকার গুগল ম্যাপের মত। এই ন্যাভিক ম্যাপকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই সাতটি উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন। আর বানিয়েছে ‘ইন্ডিয়ান রিজিওনাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ (IRNSS)। শীঘ্রই অষ্টম উপগ্রহও উড়ে যাবে পৃথিবীর কক্ষপথের দিকে।
এবার স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই ন্যাভিক ম্যাপ কি পারবে আমেরিকার গুগল ম্যাপকে টেক্কা দিতে?
প্রশ্নের উত্তরে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী ভারত। কারণ গবেষকদের দাবি এই ন্যাভিক ম্যাপ বেশ অনেকগুলি ক্ষেত্রেই গুগল ম্যাপের তুলনায় উন্নত। গুগুল ম্যাপ যেখানে আপনার গন্তব্যের ২০ মিটারের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে। তবে ন্যাভিকের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৫ মিটার। যা নিঃসন্দেহে অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণ মানুষের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সেরম গুরুত্ব না পেলেও সামরিক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব নজিরবিহীন।
অন্যদিকে, প্রযুক্তিগত দিকে থেকে বিচার করলে, গুগল ম্যাপের তুলনায় ন্যাভিক ম্যাপ দুই ধরণের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। একটি এল ৫ (1176.45 MHz) এবং অন্যটি এস ব্যান্ড (2492.028 MHz)। এর ফলে গুগল ম্যাপের তুলনায় অনেকটাই উন্নত তথ্য প্রদান করতে পারবে ন্যাভিক ম্যাপ, এমনটাই দাবি গবেষকদের। পাশাপশি, কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিবৃতি বলছে, এই ডুয়েল ফ্রিকোয়েন্সির জন্য ফ্রিকোয়েন্সি পজিশনিং প্রয়োজনীয়তা সমানভাবে পরিবেশন করা হবে। তাই ন্যাভিক ম্যাপ যে আসছে সময় গুগল ম্যাপকে ভালোই টেক্কা দেবে তা জলের মতো পরিষ্কার।
কবে থেকে চালু হবে এই ন্যাভিক ম্যাপ?
এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে, ভারত সরকার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে এই পরিষেবা। তবে শুধুই লোকেশন নয়। সেই লোকেশনের আবহাওয়া, দূষণ সংক্রান্ত তথ্য, জমি নীতি সংক্রান্ত তথ্য, চাষাবাদের খবর, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম পূর্বাভাস সবই জানাবে ওই অ্যাপ। স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি আপনার স্মার্টফোনে ধরা দেবে চিত্র।
গুগল ম্যাপ যেখানে গোল খাবে:
ন্যাভিক ম্যাপ বাজারে আসার পর গুগলের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি হবে?
গুগলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে। গুগল ম্যাপ সাধারণত বিনামূল্যে পরিষেবা দিয়ে থাকে। বিনামূল্যে দিলেও, গুগল ম্যাপ ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় তথ্যর উপর নজরদারি চালায়। এই নজরদারির উপর ভিত্তি করেই গুগল নিজে থেকে তার ব্যবহারকারীদের স্থান বিশেষে বিভিন্ন সাজেশন বা প্রস্তাব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। এছাড়াও বাণিজিকে ভাবে ব্যবহারকারীদের যাবতীয় তথ্য বিপুল অঙ্কের বিনিময় বিশ্ব-বাজারে বিক্রিও করে গুগল। যার জন্য বিশ্বজুড়ে নামি-দামি সংস্থার কাছ থেকে অনেকটাই বড় মুনাফা পেয়ে থাকে গুগল। সেক্ষেত্রে, ন্যাভিক এলে অনেকটা বড় ধাক্কা পেতে চলেছে গুগল।
Leave a Reply