স্পোর্টস ডেস্ক: খবরটা সকলের সামনে চলে এসেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইরান। এখনকার ইরান সরকার নাকি ফুটবলারদের হুমকি দিয়ে রেখেছিল: মাঠে কোনও প্রতিবাদ দেখানো যাবে না। বেচাল কিছু হলেই – তাদের পরিবারের সদস্যদের জেলে যেতে হতে হবে। সামলাতে হবে, বিস্তর অত্যাচার।
বেচাল কিছু করেননি ফুটবলাররা, সেই প্রথম ম্যাচের মতন। ম্যাচের আগে দল বেঁধে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন ইরানের ফুটবলাররা। ম্যাচে জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ডে যেতে পারেননি। মার্কিনদের কাছে এক মাত্র গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে।
সিএনএন (CNN) এই বিশেষ খবরটি সম্প্রচার করে ইরান ফুটবলারদের নিয়ে। মাঠের বাইরে বেজায় চাপ ছিল। ফিফা পড়ে গিয়েছিল বেজায় অস্বস্তিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচে যারা বিশেষ রেনবো আর্ম ব্যান্ড নিয়ে মাঠে ঢুকেছিল ( ইরানে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হয়ে), তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে ব্রেন্টফর্ডের সামান ঘোদ্দস এক সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন – তাঁর দেশ কী কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি, দল বিশ্বকাপের মঞ্চে কী প্রতিবাদী চেহারায় হাজির হবে।
সেই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফুটবল আর রাজনীতি মিশিয়ে ফেলার পক্ষপাতী নন। কিন্তু দেশে এই মুহুর্তে ফুটবল গুরুত্ব পাচ্ছে না। ইরানে স্বাধীনতা, মুক্তির লড়াই চলছে। লড়াইয়ে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। তাঁর মতে, বদল আসবেই। অনেকদিন ধরেই নাকি সেই লড়াই চলছে। সকলেই এবার পরিবর্তন চায়।
এরই মধ্যে ইউএস সকার ফেডারেশন ইরানের আন্দোলনে সামিল নারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরানের (IR) পতাকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ইস্যু নিয়েও ম্যাচের উত্তাপ চড়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এই আন্দোলনকে মান্যতা দিয়ে ইরানের এমন একটি পতাকা ব্যবহার করেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যেটা ইরানের স্বীকৃত নয়। এ নিয়ে ফিফার কাছে ইরান প্রশাসনিক কর্তারা অভিযোগ জানিয়েছে।
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে ইরান ২-১ গোলের জয় পেয়েছিল। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে ইরানের সেটাই ছিল প্রথম ম্যাচ জয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘রাজনৈতিক’ ম্যাচ বলে ধরা হত এই ম্যাচটিকে।
তেহরান আর ওয়াশিংটনের মধ্যে এই সম্পর্কের কারণেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ আর শুধু ফুটবল মাঠের লড়াই নয়। ইরান এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম রাজনৈতিক পেক্ষাপটে থাকা এক দল। সেটা বোঝা গেছে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা থেকেই।
আপাতত কাতারে ইরান নেই। কিন্তু প্রতিবাদের বার্তা নিয়ে যে অনেকেই আছে বা থাকবে – সেটা মাঠে ঢুকে পড়া মানুষগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে।
ছবি: সৌ টুইটার।
Leave a Reply