স্পোর্টস ডেস্ক: সাতে সাত। এই নিয়ে টানা সাতবার কলকাতা ডার্বির রঙ সবুজ-মেরুন। উৎসবের আনন্দে এবার উত্তেজনার জোয়ারে গা ভাসালো ৬০ হাজারের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। ডুরান্ড ডার্বির পর আবার আইএসএল ডার্বি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে লাগাতার সপ্তম ডার্বি জিতল সবুজ মেরুন। শনিবার রাতে হাউসফুল যুবভারতীতে ২-০ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারাল এটিকে মোহনবাগান।
ফুটবল মানেই ফর্ম-পরিসংখ্যান-ফিটনেস, শক্তি এবং দুর্বলতার এক অনবদ্য স্নায়ুর লড়াই। তবে,কলকাতার দুই হেভিওয়েটের মুখোমুখি হওয়া মানেই স্নায়ুর চাপ। ম্যাচের প্রথমার্ধে দু-দলের মধ্যে খুব বেশি ফারাক নজরে পড়েনি। বল পজেশনে সবুজ মেরুন শিবির এগিয়ে ছিল। গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গলই।
যদিও প্রথম ১৫ মিনিট আক্রমণে ঝড় তুলেছিলেন হুগো বুমোসরা। ৫ মিনিটে প্রথম গোল করার সুযোগ এসেছিল এটিকে মোহনবাগানের সামনে। বাঁদিক থেকে ঢুকে মাপা মাইনাস করেছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস।
কিন্তু ঠিক ম্যাচের ১৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে দারুণ সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। নাওরেম মহেশের সেন্টারে দুরন্ত হেড সেমবোই হাওকিপের। সবুজ মেরুন গোলরক্ষক বিশাল কেইথ কোনও ভুল করেননি বল আটকাতে। ২৩ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের জর্ডনকে নিজেদের বক্সের মধ্যে ফেলে দেন এটিকে মোহনবাগানের আশিস রাই। পেনাল্টির আবেদন করেছিলেন জর্ডন। রেফারি শ্রীকৃষ্ণ কর্ণপাত করেননি।
ঠিক তার পরেই ম্যাচের ৩১ মিনিটে গোল করার সুযোগ এসেছিল এটিকে মোহনবাগানের সামনে। হুগো বুমোস বক্সের মধ্যে তিনজনকে ড্রিবল করেও গোলে রাখতে পারেননি। ৪২ মিনিটে বক্সের মধ্যে ক্লেইটন সিলভাকে ফেলে দেন প্রীতম কোটাল। ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি পেতে পারত। রেফারি আবার এড়িয়ে যান। ৪৫ মিনিটে হুগো বুমোস একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দুর্বল শট ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার কমলজিতের হাতে চলে যায়। গোলের জন্য জুয়ান ফেরান্দোর অন্যতম ভরসা ছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। প্রথমার্ধে একেবারেই নিস্প্রভ ছিলেন সবুজমেরুণের এই স্ট্রাইকার। তাঁকে বল ধরার সুযোগ দিচ্ছিলেন না জর্ডন ডোহার্টি। ফলে সবুজমেরুণের গোলও আসেনি।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে গেল খেলা। মোহনবাগানের পালে যেন লাগল দমকা হাওয়া। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে কার্যত বিনা বাধায় প্রতিপক্ষ গোলের দিকে এগিয়ে গেলেন হুগো বোমাস। আশেপাশে কেউ নেই। বোমাস বক্সের বাইরে থেকেই শট নেবেন এমনটা হয়তো প্রত্যাশা করেননি ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক কমলজিৎ। হঠাৎই শট নেন বোমাস। কমলজিতের দায়সারা চেষ্টায় ডুবল ইস্টবেঙ্গল। এগিয়ে যেতেই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। ১০ মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান বাড়ান মনবীর সিং।
এরপর মরিয়া চেষ্টা চলল লাল-হলুদ বাহিনীর। তবে সেই আক্রমণ ধোপে টিকলো না। ম্যাচের শেষে সবুজ মেরুন কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে দেখা গেল নিজের জার্সি খোলার অর্ধচেষ্টা করে ছুটে গেলেন ডাগ-আউটের দিকে। জড়িয়ে ধরলেন সতীর্থ এবং প্লেয়ারদের। অন্যদিকে, হতাশায় ডুবে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ-সহ সমর্থকদের ফেলতে হল চোখের জল। আর গোটা যুবভারতী জুড়ে একটাই সবুজ-মেরুন হুঙ্কার,`যতবার ডার্বি…ততবার হারবি’।