ইউ এন লাইভ নিউজ: আইএসএলের সব দলের কর্পোরেট মালিকদের কাছে টাকার অঙ্কে জন আব্রাহাম রীতিমতো শিশু। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের শুরুর দিকে তাঁর সঙ্গে ঐ অঞ্চলের আরও দুই ব্যবসায়ী, সহযোগী হিসাবে থাকলেও পরে লাভ না পেয়ে তাঁরা সরে যান। কিন্তু ফুটবলের প্রতি প্যাশন থেকেই এই ক্লাবকে ধরে রেখেছেন এই বলিউড অভিনেতা। বলিউডের বিরল যে ক’জন অভিনেতাকে ক্রিকেট থেকে দূরে থেকে অন্যান্য খেলাগুলি নিয়ে মাতামাতি করতে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব অবশ্যই এই মালয়ালি অভিনেতা। তবে শাহরুখ, সলমন, হৃত্বিকদের মতো স্টারডম তাঁর নেই। ট্রান্সফার মার্কেটে খুব বেশী টাকা নিয়ে নামতে পারে না তাঁর ক্লাব। মূলত অ্যাকাডেমি থেকে তুলে আনা ও অন্য ছোট ক্লাব থেকে সই করানো উত্তরপূর্বের স্থানীয় উদীয়মান ফুটবলারদের নিয়ে আর কিছু জাতীয় দলের বাইরে থাকা অন্যান্য অঞ্চলের ফুটবলার নিয়ে দেশীয় ব্রিগেড সাজায় তারা, সঙ্গে বিদেশী হিসাবেও নিয়ে আসে অনামী, কম টাকার কিন্তু কার্যকর ফুটবলারদের।
বিগত দশ বছরে তাদের দল গড়ার এটাই প্যাটার্ন। এখান থেকেই যাঁরা নজর কাড়েন, তাঁদের পরের মরসুমেই দলে নেওয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকে মুম্বই সিটি, মোহন বাগান, ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় দলগুলি। ফলে প্রতিবারেই প্রায় পুরো দল খোলনলচে বদলাতে হয় নর্থইস্টকে। এইসব কারণে তাদের বিগত দশবছরে সাফল্য বলতে কিছু নেই। ট্রফি বলতে ২০২২ সালে গুয়াহাটি সি ডিভিশন জয় ও ২০২৩ নররাম বর্মন টুর্নামেন্ট জয়, দু’টিই যুব দলকে নিয়ে। এবারের ডুরাণ্ড কাপে যেন ট্রফি জেতার জন্য সংকল্পবদ্ধই ছিল পুরো হাইল্যান্ডার্স ব্রিগেড। আলাইদ্দিন আজারাই, গুইলেরমো, জীতিন এমএস, গুরমিত সিং, মিচেল জাবাকো, হামজা রেগ্রাগুই, একসঙ্গে দলে এমন কিছু খেলোয়াড় খুব কমই পেয়েছে নর্থইস্ট। ডুরাণ্ডের গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত, নর্থইস্ট কেবল যে সবক’টা ম্যাচ জিতেছে তাই নয়, প্রতিটা ম্যাচে প্রতিপক্ষকে একেবারে পর্যুদস্ত করে জিতেছে। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ মোহন বাগান যতই এই মুহূর্তে দেশের সেরা দল হোক না কেন, তাদের চারটি জয়ের তিনটিই ছিল বেশ কষ্টার্জিত। তাই ফাইনালে যুবভারতীতে মোহন বাগান যতই ফেভারিট থাকুক না কেন, নিজেদের ইতিহাসে সেরা স্পেলের মধ্যে দিয়ে চলা নর্থইস্টের সামনে গতকালই ছিল ট্রফি জয়ের সেরা সুযোগ।
ফাইনালে প্রথমার্ধে দু’গোলে পিছিয়ে পড়েও যেভাবে তারা কাম ব্যাক করেছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছিল জন আব্রাহামের মতো একজন প্যাশনেট মালিকের জন্য কিছু অর্জন করতে ফুটবলাররা কতটা বদ্ধপরিকর। অবশ্যই কাল দিনটা ছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড ও জন আব্রাহামের। দীর্ঘ দশবছরের অপেক্ষার পর কাঙ্খিত ট্রফি জিতেও যেভাবে তিনি পরাজিত প্রতিপক্ষের কাছে গিয়ে তাদের স্বান্তনা দিয়ে এসে তারপর সেলিব্রেশনে মাতলেন, তাতে তাঁর প্রতি সম্মান আরও বেড়ে যায়। অবশ্যই প্রশংসা করতে হয় নর্থইস্ট কোচ হুয়ান পেদ্রো বেনালির। বিদেশী বাছাই নিয়ে সব কৃতিত্ব অবশ্যই তাঁর প্রাপ্য। যদিও আইএসএলে অনেক লম্বা সময় ধরে অনেক বেশী ম্যাচ খেলতে হবে। মূল একাদশের সঙ্গে রিজার্ভ বেঞ্চের সামর্থ্যও দরকার এত বড় লিগে সাফল্য পেতে হলে। তবে মরসুমের শুরু থেকে যে ফর্মে আছে হাইল্যান্ডার্স ব্রিগেড, তাতে এবার নিদেনপক্ষে সেরা ছয়ে আসতেই পারে তারা।
Leave a Reply