নিউজ ডেস্ক: ৯৬ বছরে জীবনাবসান ঘটে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। মায়ের অসুস্থতার খবর পেতেই স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে পৌঁছন চার ছেলে-মেয়ে— যুবরাজ চার্লস (৭৩), রাজকুমারী অ্যান (৭২), যুবরাজ অ্যান্ড্রিউ (৬২), যুবরাজ এডওয়ার্ড (৫৮)। নিয়ম অনুযায়ী বড় ছেলে যুবরাজ চার্লসই হলেন ইংল্যান্ড-সহ ১৫টি কমনওয়েলথ দেশের রাজা। ‘কুইন কনসর্ট’ হলেন তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা।
৭৩ বছরের কিং চার্লস ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডের যুবরাজ হন। তাঁর উপাধি ‘প্রিন্স অব ওয়ালস’ এখন পাবেন তাঁর বড় ছেলে যুবরাজ উইলিয়াম। এতদিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যা যা সুবিধা পেতেন, তার সবটাই পাবেন চার্লস। এখন থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে কর-মুক্ত, লাইসেন্স ছাড়া চালাতে পারবেন যেকোনো গাড়ি, বিদেশভ্রমণে লাগবে না কোনও পাসপোর্ট।
ক্ষমতায় আসার পর কী কী সুবিধা পাচ্ছেন কিং চার্লস ?
লাইসেন্স-পাসপোর্টের দরকারই নেই
যে কোনো ধরণের গাড়ি চালাতে লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে না ব্রিটেনের রানির। জনসাধারণকে লাইসেন্সের অনুমতি দেন স্বয়ং রানিই। এবার থেকে কিং চার্লসও সেই সুবিধা পাবেন। পুরো ব্রিটেনে তিনিই হবেন একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর গাড়ি চালাতে কোনও লাইসেন্স বা নম্বরপ্লেটের প্রয়োজন হবে না।
অন্যদিকে, ব্রিটেন রাজপরিবারের একমাত্র হলেন রানিই, যাঁর পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। এখন থেকে কিং চার্লসও সেই সুবিধা পাবেন। পৃথিবীর যে কোনও দেশেই যান না কেন, কোনও পাসপোর্টই লাগবে না ব্রিটেনের রাজার।
কখনও কোনো মামলায় অভিযুক্ত হবেন না, আদালতে সাক্ষীও দিতে হবে না
ব্রিটেনের আদালতের বিচারকার্যের অন্যতম প্রধান ‘রানি’ বা ‘রাজা’। তাই রানি বা রাজাকে অভিযুক্ত করা বা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা যাবে না। রাজতন্ত্রের প্রধানের পক্ষে কোনও অপরাধ করাই সম্ভব নয়, এমনটাই ব্রিটিশ রাজ পরিবারের নিয়ম।
যে কোনও আইন পাস করতে হলে লাগবে রাজার অনুমতি
যে কোনও বিলকে, আইনে পরিণত করতে অবশ্যই রানির সম্মতি দরকার। যে কোনো প্রস্তাবিত আইন ব্রিটেনের দু’টি পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর চলে যায় রাজপ্রাসাদ। সেখানে অনুমোদন পেলে তবেই তা আইন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রয়্যাল অ্যাসেন্ট’ বা রাজকীয় সম্মতি নামে পরিচিত।
এই ‘রয়্যাল অ্যাসেন্ট’ ছাড়াও রানি বা রাজার আরও একটি ক্ষমতা আছে, তা হল ‘কুইন্স কনসেন্ট’ অথবা ‘কিংস কনসেন্ট’। কোনও আইন যদি ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে কোনওভাবে প্রভাবিত করে, তবে সেই আইন পার্লামেন্টে বিল হিসেবে তোলার আগেই রানি অথবা রাজার সম্মতির অধীন হয়। এখনও পর্যন্ত এই নিয়মটির প্রয়োগ হয়েছে ৩৯ বার।
কর দিতে হবে না
ব্রিটেনের কোনও আইন রানি বা রাজার কর দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতাকে উল্লেখ করে না। তবে, ১৯৯২ সাল থেকে রানি স্বেচ্ছায় আয়কর দিয়ে আসছেন।
ব্রিটেনের সবগুলো ডলফিনের মালিকনা
১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের রাজত্বকালে একটি বিধানে বলা হয়, ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের প্রধান দেশের সব স্টার্জন (একপ্রকার মাছ), তিমি এবং ডলফিনগুলোর মালিক। শতাব্দী প্রাচীন এই আইনটি এখনও বহাল রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সমুদ্রধারের তিন মাইলের মধ্যে যদি কোনও ডলফিন বা তিমি ধরা পড়ে, সেগুলোও তখন রাজা বা রানির মালিকানার অধীনস্ত হয়।
টেমস নদীর সব রাজহাঁসের মালিকনা
রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি জলাশয়ের সব রাজহাঁসই প্রকৃতপক্ষে রানি বা রাজার মালিকানার অধীনে। তবে রানির এই ক্ষমতা শুধু টেমস ও তার শাখানদীগুলোর ক্ষেত্রেই রয়েছে।
প্রতি বছর ব্রিটেনে রাজহাঁসদের নিয়ে ‘সোয়ান আপিং’ নামে একটি রাজকীয় অনুষ্ঠান করা হয়।
চার্চেরও প্রধান হবেন কিং
ষোড়শ দশকে রাজা সপ্তম হেনরি রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে ব্রিটেনকে পৃথক করে বসেন এবং ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড’ হয় ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। সেই চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। শোনা যায়, তিনি চার্চের জন্য বিশপ এবং আর্চবিশপদের মনোনয়নও করতেন। এবার সেই ক্ষমতাও পাচ্ছেন কিং চার্লস।
আরও পড়ুন: জোড়া খুন কাণ্ডে গ্রেফতার সত্যেন্দ্র, ফাঁসি চাই, দাবি মৃত ছাত্রের মায়ের
দু-দুটো জন্মদিন পালন
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও দুটি জন্মদিন ছিল। একটা আসল জন্মদিন, আর একটা সরকারি কাগজে-কলমে থাকা জন্মের দিন। রাজা চার্লসের আসল জন্মদিন শীতের শুরুতে মানে নভেম্বরের গোড়ায়। অন্যটা গরমের সময়ে।
ভোট দিতে হবে না
ব্রিটেনের রাজা বা রানিকে ভোট দিতে হয় না। পার্লামেন্টে যেতে পারেন ঠিকই তবে নির্বাচনে অংশ নেন না রাজপরিবারের কোনও সদস্যই। কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজা বা রানির সঙ্গে সপ্তাহান্তে বৈঠক সেরে নেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
Leave a Reply