ইউ এন লাইভ নিউজ: রাজ্য জুড়ে ‘দখল’মুক্তি অভিযান অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ধমক খেয়ে মঙ্গলবারের পর বুধবারও তৎপর রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এবং পুরনিগম। বুধবার সারা দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলেছে ‘সাফাই’ অভিযান। বেদখল হয়ে যাওয়া বহু জমি থেকে ‘দখলদার’দের সরানো হয়। ‘দখলদার’দের সরাতে মাইক নিয়ে প্রচারও করা হয় বেশ কিছু জায়গায়। কোথাও আবার সরাসরি বুলডোজ়ার বা পেলোডার নিয়ে অবৈধ দোকানপাট এবং নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ নিয়েই বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আর সেই বৈঠকেই তিনি দিলেন কড়া হুঁশিয়ারি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যে এলাকায় বেআইনি দখল হবে সেখানকার কাউন্সিলরদের গ্রেফতার করা হবে। যত বড়ই নেতা হোক তাঁকে ছাড়া হবে না। ভাল কাজ হলে পুরস্কৃতও করবো।’
অবৈধ ভাবে সরকারি জায়গা দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে গত সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা ও পুরনিগমের চেয়ারম্যান এবং মেয়রদের বিভিন্ন বিষয়ে ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার পর থেকেই বেদখল হয়ে যাওয়া জমি দখলমুক্ত করতে তৎপর পুরসভাগুলি। রাজ্যের জায়গায় জায়গায় শুরু হয়েছে দখলদার উচ্ছেদ অভিযান। তা নিয়েই এদিন বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তাঁর লক্ষ্য হকার উচ্ছেদ নয়। তিনি চাইছেন পুরো ব্যাপারটার একটা সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে হবে। আগুন লাগবে না এমন জিনিস দিয়ে স্টল বানাতে হবে। প্রতিটি স্টলের নম্বর থাকবে। এক এক জন হকার এক একটিই স্টল পাবেন। শহর কলকাতার রাস্তার ধারে থাকা ফুটপাথ দখল হওয়া নিয়েও এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, ‘গড়িয়াহাটে তো হাঁটারই জায়গা নেই। দু’টো ফুটপাথ দখল হয়ে গিয়েছে। হাতিবাগানেও হাঁটার জায়গা নেই। কাউন্সিলরা কিছুই দেখে না। আমাদের কাউন্সিলরদের দোষ আছে। কিন্তু আমাদের তো হকারদের পুনর্বাসনের জায়গা দিতে হবে। সেই ব্যবস্থা তো আছে। আমরা এটুকু খরচ তো ওঁদের জন্য করতেই পারি।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দেন, ‘রাস্তা দখলের জন্য দায়ী রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশেরাই। কাউন্সিলরদের প্রথম থেকেই এটা দেখা উচিত। কিন্তু তাঁরা দেখেও দেখছেন না। পুলিশেরা, হকার নেতারা গরীব হকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। তা করবেন না। আমি বলব, আপনারা লোভ সংবরণ করুন। জীবনধারণের জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকুন। কিন্তু তা হচ্ছে না। এলাকার নেতারা প্রথমে ডালা নিয়ে বসিয়ে দিচ্ছে তার পরে আর সরানো যাচ্ছে না। নিজেরাই বসাবেন, তারপরে বুলডোজ়ার চালাবেন, তা হবে না। পুলিশের লোভ বেড়ে গিয়েছে আজকাল। তারা গরিব হকারদের থেকে চাঁদা নিচ্ছে। মনে রাখবেন আমার দল টাকা চায় না। আমি আগেও বলেছি। এখনও বলছি। দরকার হলে মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষে করব। তাই যে পুলিশকে ইন্ধন দিতে দেখা যাবে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে সরানো হবে। কাউকে ছাড়বো না।’
এদিনের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী হকারদের পাশে দাঁড়ানোরও বার্তা দিয়ে বলেন, ‘হকারদের দোষ দিয়ে কী লাভ দোষ তো আমাদেরই। আমরা নিউ মার্কেট এলাকায় একটা বিল্ডিং বানিয়ে দিচ্ছি না কেন? যেখানে ওরা বসবে। এটা আমাদেরই করতে হবে। হকাররা সেখানে থাকবেন। গ্র্যান্ডের নিরাপত্ত ব্যবস্থা অনেক কড়া। সেখানে দেশ বিদেশের তারকা, অভিনেতারা এসে থাকেন। নিরাপত্তা রাখতে হয়। হঠাৎ করে সেখানে কিছু একটা গণ্ডগোল হলে কী হবে? সঙ্গে সঙ্গে তো এনআইএ পাঠিয়ে দেবে। তাই সেই ঝুঁকি আমরা নেব না। আর যারা বলছেন, গ্র্যান্ডের সামনেই বসতে দিতে হবে। তাদের বিষয়টা বুঝতে হবে। কাউকে বেকার করার অধিকার আমাদের নেই। তবে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমি চাই না কারও ব্যবসা বন্ধ হোক। কিন্তু বেশি সময় দেওয়া যাবে না। হকারদের আমি একমাস সময় দিচ্ছি এর মধ্যে সব গোছাতে শুরু করুন। রাস্তা পরিস্কার রাখতে হবে। আমাদের সার্ভে চালু থাকবে। আপনাদের কোথায় জায়গা দেওয়া যায়, তা সরকার দেখবে। গোডাউনের ব্যবস্থাও করবে। কিন্তু রাস্তা দখল করা যাবে না। এক মাস আপাতত উচ্ছেদ হবে না। তার মধ্যে আমরা আমাদের সার্ভের কাজ চালিয়ে যাব।’
Leave a Reply