দীপঙ্কর গুহ:

আজ আবার এক রাত। রাত জাগার রাত। মেসির সঙ্গে জেগে থাকার রাত। ঘড়ির কাঁটা যখন দেখবে রাত সাড়ে বারোটা ( দিন বলবে রবিবার ভোর সাড়ে বারোটা)। সকলের মত আমিও চাইবো – মেসির যেন বারোটা না বাজে। চার বছর পর আবার এমন এক বিশ্বকাপের আসরে নীল সাদা ( কিংবা নীল) জার্সিতে বাঁ পায়ের জাদুকরকে বল পেয়ে ছুটে যেতে দেখবো কিনা, তা ঘোর অনিশ্চয়তার। তাই আজ তাঁকেই চাই। মেসিকে চাই।

এবার দলের অধিনায়ক। কয়েক মাস আগে নেতা হয়ে কোপা আমেরিকা খেতাব জিতে কী খুশি ছিলেন! ম্যাচ শেষে ট্রফি জিতে মাঠে বসেই মোবাইল থেকে ভিডিও কল করে ছেলেদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছিলেন। বার্সা পর্বে তিনি মানসিকভাবে ক্ষত বিক্ষত ছিলেন। তারই পর সেই ক্ষতে মলম লেগেছিল। স্ত্রীকে সবসময় সবকিছুর ভাগ দিয়েছেন। নিপাট বিতর্কহীন পরিবারের এক পুরুষ।

আজও তিনি বিশ্বকাপে দলের নেতা। কিন্তু টানা ৩৬ ম্যাচ জেতা দল – আর্জেন্টিনা , টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই হেরে যায়। মেসি নিজে ম্যাচে প্রথম গোলটি করেন, পেনাল্টি থেকে। তারপর? একরাশ যন্ত্রণা। প্রথম অর্ধে সৌদি আরবের তেকাঠিতে ৩ বার বল চলে গিয়েছিল। তিনবারই গোল বাতিল হয়, অফসাইড হয়ে। গোল বাতিল হয় ঠিকই, কিন্তু এই পরিসংখ্যানটি বলে দিয়েছিল – ওই প্রথম ৪৫ মিনিট আর্জেন্টিনা রাজ করেছিল। কিন্তু সব কিছু কেমন যেন তোলপাড় হয়ে গেল, পরের ৪৫ মিনিটে!

গোল তো আর মেসিরা পেলেনই না, উল্টে দু – দুটো গোল হজম করে ফেলতে হল! এই দল নাকি ৩৬ টি ম্যাচ হারেনি! একটানা অপরাজিত? আর হার সৌদি আরবের কাছে? তাহলে বাকি তাবড় তাবড় দলের সঙ্গে কিসের টক্কর হবে?

হাজারো প্রশ্ন। একটাই উত্তর: ম্যাচ জেতো। পুরো পয়েন্ট তোলো। এবার আজ রাত থেকে সেটাই করে যেতে হবে মেসি আর তাঁর আর্জেন্টিনাকে।
গ্রুপ – সি’র ম্যাচ। আর্জেন্টিনা বনাম মেক্সিকো।

বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে টুর্নামেন্ট ফেভারিটের হেরে যাওয়া এই প্রথমবার নয়। নমুনা আগেও আছে।
২০০২ সাল। আগেরবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সেবারও ফেভারিট। সেনেগাল সেবার প্রথম ম্যাচেই ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়েছিল।

২০ বছর পর আবার এই ট্রফি জয়ের ফেভারিট দলের হার এক ‘ মিনোজ’ দলের কাছে। পরের পর্বে যেতে হলে প্রথম কাজ মেসিদের শনিবারের ম্যাচ জেতা। এই দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ই চাই।

দ্বিতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপে জার্মানিকে ‘গুড বাই’ জানিয়ে দিয়েছিল। এই ম্যাচের পর আছে পোল্যান্ডের সঙ্গে খেলা। মেসিদের জীবন বাজি রেখে খেলতে হবে এখন।

এবার খোঁজ নেওয়া যাক দুই শিবিরে।

অজেন্টিনা শিবিরের মুড?

নাহ, মোটেই ভালো নয়। বেজায় চাপে সকলে। প্রথম ম্যাচে আগে গোল করেও ম্যাচ- এশিয়ার এক দেশ সৌদি আরবের কাছে ১-২ গোলে হেরে যেতে হয়েছিল। ছন্দপতন হয়ে গেছে।
লাতিন আমেরিকার এই দলের এবারের ট্রফি জয়ের তাগিদ অন্য এক কারনে। মেসির হয়তো এটাই শেষ বিশ্বকাপ। সেই জয়ের স্বপ্নে বেজায় অস্বস্তি শুরু।

মেক্সিকোর?


টুর্নামেন্ট শুরু থেকে এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত ফুটবলের বোদ্ধাদের ধারণা এই দল গ্রুপে তিন নম্বর জায়গা পাবে। যদিও দলটি প্রথম ম্যাচ ড্র করে পয়েন্ট ঘরে তুলে রেখেছে। মেসিরা সেটাও পারেননি। বরাতও ভালো মেক্সিকোর। তাই পোল্যান্ডের ম্যাচে রবার্ট লেওয়ান্দস্কি পেনাল্টি মিস করেছিলেন। এই দলও চাইবে আজেন্টিনা ম্যাচেও যদি পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়া যায়।

চোট – আঘাত সমস্যা?

আর্জেন্টিনা : নেই এ সমস্যা। তবে দলে প্রথম একাদশে রদবদল হবে বলে মনে হচ্ছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা ফুটবলার লিসান্দ্র মার্টিনেজকে শুরু থেকে খেলানো প্রায় নিশ্চিত। হতে ম্যান সিটির জুলিয়ান আলভারেজ আর পাওলো দিবালা ঢুকে পড়তে পারেন প্রথম একাদশে।

মেক্সিকো: এই দলেও নেই সে সমস্যা। আগের ম্যাচে যে দল খেলেছে, সেই দলে উলভসের তারকা ফুটবলার রাউল জিমেনেজকে প্রথম একাদশে আনা হতে পারে। অভিজ্ঞতার বিচারে আন্দ্রেস গুয়ারদাদোকে খেলানো হতে পারে।

এই ম্যাচের তারকা কে হতে পারে?

আর্জেন্টিনা: সব দিক বিচার করে একটাই নাম মনে ভাসছে – এল এম টেন ওরফে মেসি।

যদিও লাতিন আমেরিকার দলে তারকা ফুটবলারদের অভাব নেই। কিন্তু একজন মহাতারকা। তিনি মেসি। একাই একটা ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন মেসি। ক্লাব বা দেশের হয়ে বহুবার তা করে দেখিয়েছেন। আজ সেটাই করতে হবে। প্রতিপক্ষ চাইবে এই মেসিকে বোতলবন্দি করে রাখতে। আমার ধারণা সৌদি আরবের ম্যাচটি হেরে এই মেসি বাহিনীর এখন অস্তিত্ব সংকটে । আজ তাই পাল্টা জবাব দেওয়ার দিন।

মেক্সিকো: দলের অভিজ্ঞ গোলকিপার গুইলেরমো ওচোয়া। বড় ম্যাচে সবসময় নিজের সেরাটা দিয়ে নজর কেড়ে নেন। তাঁকেও নিজের সেরাটা তুলে আনতে হবে এই মেসি, মার্টিনেজ, দিবালাদের মতো করে।

দুই দলের লড়াইয়ের ইতিহাস?

আর্জেন্টিনা – মেক্সিকো নিজেরা ৩৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। আর্জেন্টিনা ১৬ বার জিতেছে। ৫ বার হারতে হয়েছে।
আর টাটকা এক পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে, শেষ টানা ১০ টি ম্যাচে আর্জেন্টিনাই জিতে রেখেছে। শেষবার দেখা হয়েছিল সেই ২০১০ সালে। সেই ম্যাচে মেসিরা ৩-১ গোলে জিতেছিল।

এই ম্যাচের আগাম স্কোরলাইন :

আর্জেন্টিনা -৩ মেক্সিকো -১

ছবি: সৌ টুইটার।