দীপঙ্কর গুহ: টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দাপাচ্ছেন তিনি। অধিনায়ক রোহিত শর্মা যখনই তাঁর জন্য বল হতে ধরিয়ে দিচ্ছেন, তখনই বুঝিয়ে দিচ্ছেন – তিনি ফুরিয়ে যায়নি। মহম্মদ শামি। এই বিশ্বকাপ তো খেলতেনই না। রাহুল দ্রাবিড় “স্যার” আর জাতীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা তো আগেই বলে দিয়েছিলেন , টি টোয়েন্টির জন্য শামি নন। আগামী দিনের কথা ভাবতে হবে। বুমরা বেসামাল হয়ে শামি প্রথমে স্ট্যান্ড বাই ছিলেন। তারপর মূল দলে ঢোকেন। এবং সকলের শেষে একা বিমানে চেপে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যান। সেদিন থেকে জিম্বাবোয়ে ম্যাচের আগে পর্যন্ত – তিনিই রোহিতের মুশকিল আসান।
কিন্তু কী ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন শামি, তা ক’জন জানেন? হতে গোনা সামান্য কয়েকজনের মধ্যে আছেন – মহম্মদ বদরুদ্দীন। আজকের শামির ছোটবেলার কোচ তিনি। এখন ছাত্রের দাপুটে বোলিং টিভিতে দেখছেন। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বলেই ফেললেন, ” বেটা, হারতেই চায় না। কিন্তু সেই ছেলে, বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলে নিজের নাম নেই দেখে খুব মুষড়ে পড়েছিল। আল্লাহ, সুযোগ ঠিক দিয়েছেন। শামি নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছে “।
৩২ বছরের শামি নাকি শুধু টেস্ট আর ওয়ান ডে তে চলবে। কোচ রাহুলের জমানায় এমনটাই রীতি নীতি। ঋদ্ধিমানের হাল তাই হয়েছে। পন্থ নাকি আগামী দিনের প্রতিভা, তাই তাঁকে সুযোগ দাও। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিচ্ছে পারফরমেন্স শেষ কথা বলে। পন্থ মাঠের বাইরে, মধ্য ত্রিশের গন্ডি টপকে যাওয়া দীনেশ কার্তিক খেলছেন।
শামিও খেলছেন। বুমরার পিঠের চোটে ছিটকে যেতে, মূল দলে বাংলার এই পেসারটি ঢোকেন। এশিয়া কাপে ভারতের ব্যর্থতার পরও ১৫ জনের প্রথম দলে রাখা হয়নি শামিকে। রাখা হয়েছিল রিজার্ভ তালিকায়। দলের সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু বিধির বিধান কে খন্ডায়!
শামি এখনও পর্যন্ত ভারতের খেলা ৪ টি ম্যাচেই খেলেছেন। প্রতিটিতে একটি করে উইকেটও নিয়েছেন। যেটা দলের কাজে লাগছে, তিনি বাকি পেসারদের থেকে কম রান দিচ্ছেন। তাতে অন্যদের ওপর আক্রমন চালাতে গিয়ে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিয়ে বসছেন।
কোচ বদরুদ্দীন রাখ ঢাক না রেখেই বলেছেন, ” বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলে নিজের নাম নেই দেখে রাগে ফেটে পড়েছিল, বেটা। কিন্তু বাইরে কিছুই বুঝতে দেয়নি। অস্ট্রেলিয়ায় ওর মতো বোলারদের তো জায়গা। ধরেই রেখেছিল, সুযোগ পাবে। কিন্তু মনে ধাক্কাটা লেগেছিল – তখন। “
নিজেকে তৈরি রাখতো। দলে না থেকেও, এন সি এ তে , কিংবা নিজের ফার্ম হাউসে বানানো উইকেটে বল করেই যেতেন। কোচের নাকি মন বলতো, শামি বিশ্বকাপে খেলবে। তিনি শামিকে এটা বলে যেতেন। আর শামি নিজেকে ফিট রেখে প্র্যাকটিস সারতেন। ” চুপ করে শুনতো আমার কথা, প্রতিবাদ করতো না। ভিতরে আগুন জ্বলছে – এটা বুঝতাম। এখন, দেখুন সে কেমন খেলছে।” – একটানা বলে গেলেন বদরুদ্দীন।
কেমন করে শামি নিজেকে ফিট করে, নিশানা ঠিক করতেন? কোচ বলছেন: ” ১০ টি ভেজা বল রাখা থাকতো। একটানা বল করে যেত। ভেজা বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হয়। কিন্তু তা রপ্ত হয়ে গেলে, গ্রিপ এত ভালো হয় যে – বলের সিম সারাক্ষণ সোজা রাখা সহজ হয়। এভাবে একটা – দশটা বল নয়, ১০০ টা বল সে করে যেত। নিজের স্কিল ঠিক রাখবে বলে, এটা করতো। এখন দেখুন, কেমন সে বল করে যাচ্ছে।”
শামির লড়াই এটাই নয়, আরও আছে। কয়েক একর জমি আছে তাঁর। যদি দেখে ঠিক মত ফসল হচ্ছে না, একটা ট্রাক্টর এনে – সেটা দিয়ে মাটি ওলোট পালোট করেন। ঘণ্টার পর ঘন্টা দৌড়তে পারে এখনও। তিনি এমন এক ক্রিকেটার যিনি, জিমে নিজেকে ফিট রাখতে বিশ্বাস করেননা। বরঞ্চ দৌড়ে যেতে চান। সেটাই তাঁর আসল মন্ত্র। নিজের সেই ফর্মে দুটো উইকেট বানিয়ে রেখেছেন। একটা স্লো। আরেকটা, শক্ত – ফাস্ট। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উইকেট রেখে বল করে যান।
আরও পড়ুন: দলগুলি পাবে টিভি স্বত্ব বিক্রির অর্থের অংশও, যুগান্তকারী পদক্ষেপ ফেডারেশনের!
কোচ বদরুদ্দীন তাঁর আল্লাহকে ডেকে চলেছেন। প্রার্থনা একটাই, ভারত যেন ফাইনাল খেলে আর ট্রফি জেতে। আর তাঁর “বেটা” শামি – ম্যাচের সেরা হয়।
Leave a Reply