দীপঙ্কর গুহ : কোনও পাড়া ফুটবল ম্যাচ ছিল না। ছিল বিশ্বকাপের ফুটবল ম্যাচ। গুরুত্ত্বপূর্ণ ম্যাচ। ফিফা রাঙ্কিংয়ে থাকা দুই নম্বর দল বেলজিয়াম বনাম মরক্কো। এমন এক ম্যাচে দলের অন্য ফুটবলারদের সঙ্গে মাঠে তিনি ওয়ার্ম আপ সারলেন। জাতীয় সংগীতের সময় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে সকলের সঙ্গে সুর মেলালেন। তারপর গায়েব!
ইয়াসিন রেনগ্রাগুই। মরক্কোর গোলকিপারকে নিয়ে যতো জল্পনা। এতসব হয়ে যাওয়ার পর তিনি ম্যাচটি না খেলে সরে যান। ম্যাচটি খেলেন আরেক গোলকিপার মুনির।
ম্যাচ শুরুর ২৫ মিনিট কেটে যাওয়ার পরও বিবিসি ধারাভাষ্যকাররা জানতেন মরক্কোর গোল আগলাচ্ছেন ইয়াসিন বৌনও। ঠিক কি হয়েছিল, সেদিন মাঠে সেটাই এবার খোলসা করে জানিয়ে দিলেন দলের ম্যানেজার ওয়ালিদ রেনগ্রাগুই।
কী ঘটেছিল যে রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজানোর আগে মরক্কো গোলকিপার বদল হয়ে গিয়েছিল?
বেলজিয়ামের বিপক্ষে খেলার জন্য সেরা একাদশ বেছে নিয়েছিলেন ম্যানেজার ওয়ালিদ রেনগ্রাগুই। সেই দলে ছিলেন ইয়াসিন বৌনও। দলের সকলের সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে গোল মেলান। তারপরই ঘটে যায় সব কিছু।
ম্যানেজার ওয়ালিদ রেনগ্রাগুইয়ের কাছে চলে যান ইয়াসিন বৌনও। কিছু কথা বলেন নিচু গলায়। তড়িঘড়ি করে দ্বিতীয় গোলকিপারকে মাঠে নামতে বলেন রেনগ্রাগুই।
এরপর মাঠে ঢুকে মুনির মহামেদি দলের বাকিদের সঙ্গে গ্রুপ ফটো তোলেন। আর সোজা গিয়ে বারপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে পড়েন। অনেকেই এই গোলকিপার বদলের ঘটনাটি খেয়ালই করিনি। এমনকি ম্যাচের ধারাভাষ্যকাররাও না!
প্রথম অর্ধে মরক্কো গোলকিপার বেলজিয়ামের মিচি বাতশুআইয়ের একটি দারুন শট রুখে দেওয়ার সময়ও তাঁকে বৌনও ভেবে বলা হয় ‘বোনো’ এক দারুণ প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন! আসলে সেটা ছিলেন – মুনির।
কেন এসব ঘটে যায়? ম্যানেজার ওয়ালিদ রেনগ্রাগুইয়ের থেকে অনেক পরে জানা যায়, আসল কারণ। সেভিল্লার এই মরক্কো গোলকিপারটি এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে চোট পেয়েছিলেন। সেই চোট নাকি মাঝে মাঝে তাঁকে বিব্রত করছিল। ৩১ বছরের ইয়াসিন বৌনও দলের সঙ্গে ওয়ার্ম আপ সারতে গিয়ে সামান্য অস্বস্তি বোধ করেন। জাতীয় সংগীতের লাইনে দাঁড়িয়ে হয়তো অনুভব করেন, আগে দেশ – আগে দল। তাই পুরো ১০০ শতাংশ ফিট না থাকায় বিশ্বকাপে নিজের আরও একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হেলায় ছেড়ে দেন। ম্যানেজার সঙ্গে সঙ্গে মুনিরকে মাঠে পাঠান।
ম্যানেজার ওয়ালিদ রেনগ্রাগুইয়ের প্রশংসা করেন ইয়াসিন বৌনওয়ের এমন মানসিকতার। সততার। বলেছেন, ‘ আমার দলের শর্ত একটাই, ১০০ শতাংশ ফিট ফুটবলাররা দলে জায়গা পাবে। ইয়াসিন এটার গুরুত্ব বুঝেছিল। তাই নিজের জায়গা মুনিরকে ছেড়ে দিয়েছিল, ম্যাচের কয়েক সেকেন্ড আগে।’ আর মুনির দারুণ খেলে। মরক্কো হারিয়ে দেয় শক্তিশালী বেলজিয়ামকে। এই বিশ্বকাপে আরও একটি বড় অঘটন। তার প্রভাবের আঁচ পড়েছে খোদ বেলজিয়ামে। সেখানকার কিছু শহরে দাঙ্গা লেগেছিল। গাড়ি ভাঙচুর – আগুন লাগানো , ভয়ানক সব ঘটনা ঘটে গেছে।
কিন্তু একটা ঘটনা বলে দিয়ে গেল, সততা থাকলে সাফল্য আসে।
ছবি: সৌ টুইটার।
Leave a Reply