রোদ-ছায়ার কাটাকুটিতে রহস্যময় পাহাড়ের কোলে আদিবাসী গ্রাম

ঠিক যেন ঘরের উঠোনে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পাহাড় তো, তাই কিছুটা হয়ত রহস্যময়। বর্ষার মেঘ কখনও তার চুড়াকে ঢেকে দিচ্ছে, কখনও রোদ-ছায়ার মোহময়তা তাকে ঘিরে রাখছে। আসলে তো পাহাড় নয় টিলা। ১৪৮০ ফিটের আস্ত একটা টিলা। বাঁকুড়া জেলার অন্যান্য টিলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু। ছোটনাগপুর মালভূমিটাইতো এরকম ছোট ছোট কত টিলায় ভর্তি। কিন্তু বিহারীনাথ যেন সবার চেয়ে অপরূপ। আদিম নৈঃশব্দ। মহুয়া, শাল, পিয়ালের একাকী মৌন এই পাহাড় বড় আপন, বড় নিজের। তার সাথে মনে মনে কথা বলা চলে…।

বর্ষায় পাহাড়ের রঙ থাকে সবুজ আর তার ওপর রোদ আর মেঘের ছায়ার নানা মায়াবী খেলা চলে। তা দেখতে দেখতেই কখন বেলা বয়ে যায়। পাহাড় বেয়ে ওঠাও খুব একটা শক্ত নয়। বনজঙ্গলের মধ্যে দিয়েই পায়ে চলা পথ উঠে গেছে। তবে বর্ষায় বেশ বিপজ্জনক। পাহাড়ের ওপরে কোনও বসতি নেই। বিহারীনাথ থেকেই চোখে পড়ে শরপাহাড়ি আর দূরের দিগন্তরেখায় আঁকা আবছা পাঞ্চেত পাহাড়।

পাহাড়ের নীচেই আছে শিব মন্দির, লাগোয়া জলাশয়। মন্দিরের পাশ দিয়ে সাপের মতন এঁকে বেঁকে কালো পিচের রাস্তাটা চলে গেছে শালতোড়ায়। এই রাস্তাটাই বিহারীনাথের একমাত্র রাস্তা। যেতে জনহীন এই পথের দুপাশে আছে আরও কিছু নাম না জানা ছোট ছোট টিলা। রাস্তার অন্যপ্রান্ত গিয়ে পড়েছে একটা তেমাথায়। তেমাথা থেকে একটা রাস্তা গেছে ইতুড়ির দিকে। এই ইতুড়ি থেকে একেবারে লালমাটির একটা ভাঙাচোরা রাস্তা ৩ কিমি দূরে বিনোদপুর গ্রামে। বিনোদপুর থেকে বনপথ ধরে হাঁটলেই ছোট্ট একটা ড্যাম। ড্যামের জলাশয়ের ঠিক অপর পাড়েই মাথা তুলেছে ছোট ছোট টিলা। স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে একটা টিলার নাম ‘লেদুরি’। বনের মধ্যে জনমানবহীন এই জলাশয় প্রান্তরে প্রকৃতি আর মন যেন মিলেমিশে একটাই সত্তা হয়ে যায় কখন।