সোভিয়েত গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন পুতিন। কিন্তু গত শতকের নয়ের দশকে সোভিয়েতের পতনের পরে বরিস ইয়েলৎসিনের প্রশাসনে কূটনীতিক হিসেবে পা রাখেন। তারপর ক্রমেই বাড়তে থাকে তাঁর প্রতাপ। ধীরে ধীরে ইয়েলেৎসিনের উত্তরসূরি হিসেবে ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকে পুতিনের নাম। আসলে ইয়েলেৎসিন শাসক হিসেবে ছিলেন কার্যতই দুর্বল। তাঁর জনপ্রিয়তাও তেমন জোরদার ছিল না। ফলে বিকল্প মুখের উঠে আসা প্রত্যাশিতই ছিল। কেননা এমন কাউকে দরকার ছিল যিনি একটা ভিন্ন ইমেজ গড়ে তুলবেন শক্তি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার মিশেলে।
ইয়েভগেনি প্রিমাকভ ও সের্গেই স্টেপাশিনের মতো দুই দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর পরে সেই স্থানে বসলেন পুতিন। এই সময় থেকেই তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথটা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায়। পরের বছরই ২০০০ সালের মার্চে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে রাশিয়ার মসনদে বসেন পুতিন। শুরু হয় এক নতুন জমানার।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল বুনিয়াদই ছিল সমাজতন্ত্রের। পুতিন যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ততদিনে সোভিয়েতের পতনের এক দশক কেটে গিয়েছে। নতুন রুশ প্রেসিডেন্ট সেই সমাজতন্ত্রকে ছেঁটে ফেলেন বটে। কিন্তু উসকে দেন সোভিয়েত আবেগকেও। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে বিকেন্দ্রীকরণের বিপরীত পথে হেঁটে নতুন রাস্তা তৈরি করে ফেলেন তিনি। গ্যালিমভের কথায়, ”তিনি যতই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছিলেন, ততই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছিল।”
২০০৫ সালে মস্কোয় ‘ভিকট্রি ডে’ উদযাপনের সময় চিন, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স এবং আমেরিকার প্রতিনিধিদের সামনে তিনি বলেন, ”গোটা বিশ্বে নিরাপত্তা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাই আমাদের সকলের কর্তব্য। পাশাপাশি দেশগুলির মধ্যে এমন সংস্কৃতি তৈরি হোক, যাতে আর কোনও যুদ্ধের প্রয়োজন না পড়ে। সে শীতল হোক কিংবা গরম।” কিন্তু হাওয়া ক্রমেই ঘুরে যেতে থাকে। ন্যাটো যতই ইউরোপে প্রসারিত হচ্ছিল, তত ছবিটা বদলাচ্ছিল। ২০০৭ সালে আমেরিকাকে কাঠগড়ায় তুলে পুতিন সরাসরি বলেও ফেলেন আমেরিকা নিজেদের জাতীয় সীমানাকে অতিক্রম করে চলেছে। সেই সময় থেকেই ফের যেন ঠান্ডা যুদ্ধের আমেজ ফিরে আসতে শুরু করে।
২০০৮ সালে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যেতে হয় পুতিনকে। কেননা পরপর দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকা যায় না। এই সময়ে তিনি ফের দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রেসিডেন্ট হন দিমিত্রি মেদভেদেভ। প্রথম ৮ বছরের নেতৃত্বে রাশিয়াকে অভিনব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন পুতিন। এরপর ২০১২ সালে ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন পুতিন। ততদিনে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ চার থেকে ছবছর হয়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন পুতিন। এরপর ২০২০ সালে সংবিধানে এমন পরিবর্তন করেন, যার ফলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত তাঁর প্রেসিডেন্ট থাকা নিশ্চিত হয়ে যায়।
কিন্তু কেন? ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার পরেও নতুন করে প্রেসিডেন্টের চেয়ার আঁকড়ে থাকার খেলায় ফিরে আসতে হয়েছিল পুতিনকে? মনে করা হয়, ২০১১ সালে আরবের উত্থান ও লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গদ্দাফির পরিণতি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল পুতিনের মনে। তাঁর মনে হতে থাকে, এই পরিণতি তাঁরও হবে না তো! ফলে ফের গদির কাছে ফিরে আসাই মনস্থ করেন পুতিন।