নিউজ ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এম কে স্টালিন, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ‘মুখ দেখানোয়’ রাশ টানল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের আনা নতুন প্রকল্পে এমনই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। নতুন এই নিয়মের ফলে, এবার থেকে কেন্দ্রের টাকায় চলা কোনো প্রকল্পে, শুধু মুখ্যমন্ত্রীদের মুখ আর দেখা যাবে না। নতুন এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের লোগো এবং ব্র্যান্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রাজ্যগুলির একচেটিয়া প্রচারকে বন্ধ করার জন্য নতুন নিয়ম জারি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রের তরফে চলতি বছরেই দেওয়া হবে সুদ মুক্ত ঋণ। এই ঋণের সময়সীমা থাকবে ৫০ বছরের। এই ঋণ পেতে গেলে রাজ্য গুলিকে মেনে চলতে হবে কিছু শর্ত। শর্ত না মানলে বঞ্চিত থাকতে হবে এই লোভনীয় সুযোগ থেকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে ২০২২-২৩ সাল থেকে ৫০ বছরের জন্য যে রাজ্য সুদ-মুক্ত ঋণ গ্রহণ করবে, তাদের রাজ্যের প্রকল্পগুলির বিজ্ঞাপনে কেন্দ্রের ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে ঋণ।
এই স্কিমের অধীনে ঋণ পাওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে দুটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।
১) রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা যাবতীয় তথ্য বিস্তারিত জানাতে হবে। এর ফলে কেন্দ্রের অর্থ রাজ্যগুলি কোথায় কিভাবে ব্যবহার করছে তা বোঝা যাবে।
২) রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের অর্থ ব্যবহার করার জন্য কোনও প্রকল্পে শুধু রাজ্যের ব্র্যান্ডিং রাখলেই হবে না। রাখতে হবে কেন্দ্রের লোগো। কারণ প্রকল্প চালানোর অর্থ ঋণ হলেও তা কেন্দ্র থেকে আসছে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গত ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনে ঘোষণা করেছিলেন যে কেন্দ্রীয় সরকার তার ‘পুঁজি বিনিয়োগের জন্য রাজ্যগুলিকে বিশেষ সহায়তা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ বছরের মেয়াদে ১ লাখ কোটি টাকার সুদ-মুক্ত ঋণ দেবে।
এই বিষয়ে একজন পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন,“অনেক রাজ্য কেন্দ্রের কাছ থেকে অর্থ নেয় কিন্তু তাদের নিজস্ব প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করে এবং তাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি এবং রাজ্যের লোগো ব্যবহার করে। এটা করা ঠিক নয়।”
তিনি আরও বলেন,”কেন্দ্রীয় তহবিল ব্যবহারকারী রাজ্যের প্রকল্প গুলিতে কেন্দ্রের ব্র্যান্ডিং থাকবে বলে আশ্বাস দিলে তখনই অর্থ দেওয়া হবে।”
এখনও অবধি, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২-২৩ অর্থ বর্ষে রাজ্য-প্রকল্পের জন্যে ৩০,০০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। এই অর্থ রাজ্যগুলিকে দুই কিস্তিতে দেওয়া হবে। তাই, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল রাজ্যের কাছে স্থানান্তরের জন্য অনুমোদিত হলেও, কেন্দ্রের ব্র্যান্ডিং না থাকলে অর্থ পাওয়া যাবে না।
যেমন, তামিলনাড়ু তার নিজস্ব প্রকল্প, মহিলাদের স্ব-সহায়তা গোষ্ঠীগুলিকে (এসএইচজি) সাহায্য করার জন্য যদি কেন্দ্রীয় তহবিল ব্যবহার করে তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজ্যের লোগো বা তার মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে প্রকল্পটির বিজ্ঞাপন দিলে হবে না। এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্র্যান্ডেড লোগো।
পদস্থ আধিকারিক আরও জানিয়েছেন,”সেপ্টেম্বর নাগাদ, সরকার ৬০,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে, ৫০ বছরের জন্যে সুদ-মুক্ত ঋণের অর্থ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হবে।”
চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সাড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার মধ্যে রাজ্যগুলির ৫০ বছরের সুদ-মুক্ত ঋণ হিসাবে আলাদা ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
১ লক্ষ কোটি টাকার ৮০% (অর্থাৎ ৮০,০০০ কোটি টাকা) বিতরণ করা হবে ১৫তম অর্থ কমিশনের (FFC) সুপারিশে। অবশিষ্ট ২০% (২০,০০০ কোটি টাকা) রাজ্যগুলি প্রশাসনিক সংস্কারমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
Leave a Reply