ইউ এন লাইভ নিউজ: লোকসভার তৃতীয় দফার ভোটের পাশাপাশি আজ সকলের নজর ছিল এসএসসি মামলার শুনানির দিকে। আজ সারাদিন যাবৎ সুপ্রিম কোর্ট থেকে খবর আসতে থাকে এই মামলার রায় সংক্রান্ত। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চে আবার শুরু হল এসএসসি মামলার শুনানি। ইতিমধ্যেই এসএসসি কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, বাতিল হওয়া ২৫৭৫৩ চাকরির মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার চাকরি পেয়েছিলেন যোগ্য প্রার্থীরা। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ে এখনই কোনও ‘স্থগিতাদেশ’ দিচ্ছে না শীর্ষ আদালত। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাবে। মামলার আগামী শুনানি হয়ে জুলাই মাসে। আগামী ১৬ জুলাই অবধি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। যোগ্য এবং অযোগ্যযদের বিভাজন যদি এসএসসি করতে পারে তাহলে পুরো প্যানেল বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না। আজ শুনানির পর সংক্ষিপ্ত রায়ে এমনই জানাল সুপ্রিম কোর্ট।
চাকরিহারাদের আইনজীবীরা আদলতকে জানালেন, সিবিআই যে ওএমআর শিট উদ্ধার করেছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ওই সমস্ত ওএমআর শিট নাইসার দফতর থেকে উদ্ধার হয়নি। পাওয়া গিয়েছে এই সংস্থার প্রাক্তন এক কর্মী পঙ্কজ বনসলের বাড়ি থেকে।
চাকরি বাতিল মামলায় চাঞ্চল্যকর মোড়। মামলার শুনানিতে যোগ্য প্রার্থী ঠিক কতজন তা জানাল স্কুল সার্ভিস কমিশন। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়ের বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। আর সেই শুনানিতে যোগ্য প্রার্থী ঠিক কতজন তা প্রথমবারের জন্য জানাল এসএসসি।
আদালতে চাকরিহারাদের আইনজীবী এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘‘৬৫ বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী বৈদ্যুতিন তথ্যের কোনও সার্টিফিকেট নেই। অথচ এক কথায় ২৬ হাজার চাকরি চলে গেল।” তাঁর যুক্তি, ৬৫বি আইনের ধারা মেনে শংসাপত্র না থাকলে প্রযুক্তির দিক থেকে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
কেউ অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে চাকরিহারাদের আইনজীবিদের কাছে জানতে জানতে চাওয়া হলে তাঁদের মধ্যে থেকে একজন জানান, ” বৈধ এবং অবৈধদের একই তুলি দিয়ে রং করা হয়েছে। ৫ বছর ধরে চাকরি করছেন। বেআইনি নিয়োগ হয়নি।”
এসএসি মামলায় আজ সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আদালতে এসএসসির দেওয়া তথ্যের পরে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে প্রধান বিচারপতি সওয়াল করেন যদি ৮,৩২৪ জনের নিয়োগ অবৈধ হয় তাহলে পুরো প্যানেল বাতিল কেন? তাতে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন যে এসএসসি যাঁদের নিয়োগ বৈধ বলে দাবি করেছে সেটা পুরোটাই অবৈধ।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বাতিল হয়েছে ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল। চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মী। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সম্মিলিতভাবে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। গত শুনানিতে প্রশ্ন উঠেছিল সুপার নিউমেরারি পদ গঠন তৈরি নিয়েও। হাই কোর্ট এই নিয়ে সিবিআইকে তদন্তের আদেশ দিয়েছে। তবে প্রথম দিনের শুনানিতে সেই তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সিবিআই কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারবে না। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল সোমবার পর্যন্ত।
এছাড়াও চাকরিহারাদের আইনজীবী আদালতকে বললেন, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা উচিত। কারণ তিনি ইন্টারভিউতে বলেছেন, তাঁকে রাজনীতিতে নামার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হোক।
সুপ্রিম কোর্টের এই সংক্ষিপ্ত রায়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ”এখনই চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। সিবিআই যেমন অবৈধ নিয়োগ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল, সেভাবেই তদন্ত চালিয়ে যাবে। আপাতত কাউকে বেতন ফেরত দিতে হবে না। তবে এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে। পরে তাঁদের নিয়োগ ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণিত হলে অযোগ্যদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
তো এই মামলার ভবিষ্যতে চাকরিরিহারাদের জন্য কি অপেক্ষা রয়েছে তা জানা যাবে আগামী ১৬ জুলাই।
Leave a Reply