Pakistan Cricket : “গুরু গ্রেগ” পারেননি, বিশ্বকাপে বাবারদের টানছেন এক অজি ক্রিকেটার

দীপঙ্কর গুহ:

বিশ্বসেরা হওয়ার লক্ষ্যে এক প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটে। তিনি দলবল নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ জেতা তো দূরে থাক – ৫০ ওভারের সেই বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগ থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। তিনি “গুরু গ্রেগ” ওরফে গ্রেগ চ্যাপেল। আর এবার ঠিক উল্টো ফল পাচ্ছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখে, ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করে – এখন বাবার আজামরা ফাইনালে। নেপথ্যে সেই প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার – ম্যাথু হেডেন। ভারতের কাছে ম্যাচ হেরে যখন পাক ক্রিকেটাররা নেতিয়ে পড়েছে, তখন তিনি পাক ড্রেসিংরুমে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন। নেতা বাবরকে ডেকে নিয়ে সকলের জন্য কথা বলতে বলেছিলেন। সেই ভিডিও মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।

এবার ফাইনালে পৌঁছে অস্ট্রেলিয়ান কায়দায় মাইন্ড গেম শুরু করে দিলেন ম্যাথু হেডেন। কী বলছেন? মন দিয়ে শোনা যাক প্রাক্তন অজি সেই মারকুটে ওপেনারের কথা। ” এই পাকিস্তানের হাত থেকে আর কারও মুক্তি নেই ” । এতো সাবধান বার্তা! সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হতেই এমন হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং পরামর্শদাতা ম্যাথু হেডেন। তাঁর হুঁশিয়ারি যে ফাঁকা আওয়াজ ছিল না, তার প্রমাণ হাতে নাতে মিলেছে। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে

দাপট দেখিয়ে পাক দল ফাইনালে ।

টুর্নামেন্ট এক সময় যখন শেষ চার খেলা নিশ্চিত করতে যে দলটির নাভিশ্বাস উঠেছিল, তারাই কিউইদের হেলায় হারিয়ে চলে গেল ফাইনালে।আর এই ম্যাচ জেতা সাঙ্গ হতেই, ম্যাচের পর আবার ফাইনালের প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে রাখলেন হেডেন। জমাট আত্ম বিশ্বাস নিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে ভয়ংকর রূপটা নাকি এখনও দেখা যায়নি, ফাইনালের জন্যই সেটা তুলে রাখা আছে। আর তিনি ভারতকেই ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে চান এটা বলেও লাভ হল না। অন্য সেমিতে ভারত ১০ উইকেটে হেরে গেল ইংল্যান্ডের কাছে।

পাক বোর্ড সভাপতি, প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার রামিজ রাজা – তখনকার দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে পরামর্শ করে এই প্রাক্তন অজি ক্রিকেটারটিকে দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা করে আনেন। হেডেন ক্রিকেটারদের মেন্টাল স্ট্রেন্থ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। স্টিভ ওয়ার সময় বিশ্ব জুড়ে খেলে যাওয়া অপরাজিত অজি দলের অন্যতম সফল ক্রিকেটার তিনি। সেই অজি মূলমন্ত্র ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন বাবার – শাহিনদের মনে। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিল পাক দল। আর সেই সেমিফাইনালে দেখা মিলল দুর্দান্ত পাকিস্তানের। আগে বল করার সময় দেখা গেল শাহিন-হারিসদের আঁটোসাঁটো বোলিং। তারপর রান তাড়া করতে নেমে বাবর-রিজওয়ানের ওপেনিং জুটিতে শ’ রানের দুর্দান্ত জুটির দাপট। ম্যাচে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগই পায়নি কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৫ বল আর ৭ উইকেট বাকি থাকতে মেলবোর্নের ফাইনাল খেলাটা নিশ্চিত করে ফেলে পাকিস্তান।

ফাইনালে উঠে এখন ট্রফি হতে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না পাকিস্তান।আর সেই ফাইনাল ম্যাচের জন্য নিজেদের সেরাটা জমিয়ে রেখেছে পাক দল- এমনটা বলে দিয়েছেন পাক ব্যাটিং কোচ হেডেন, “সেমিতে এই রাতটা বিশেষ দিন। আমাদের ফাস্ট বোলিং আক্রমণ দারুণভাবে সফল। আমি মনে করি না, নিজেদের সেরাটা এখনও আমরা দিতে পেরেছি। সেটা যদি ফাইনালে দিতে পারি, সেই ভয়ংকর রূপ, ফাইনালে যারা আমাদের প্রতিপক্ষ হবে তাদের কিন্তু বিস্তর ঘাম ঝরিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। মেলবোর্নের উইকেট ভালো এবং ব্যাটারদের সাহায্য করতে পারে। স্বপ্নটা তাই এখন আকাশছোঁয়া। দারুণ কোনও অদম্য ইচ্ছেকে কখনোই দমিয়ে রাখা যায় না। এই দুজন (বাবর-রিজওয়ান) কয়েক বছর ধরে এটা করে আসছে। ওদের আগ্রাসী মনোভাব দলে ছড়িয়ে গিয়েছে। ”

সেমিফাইনালে জেতার পর দলের ক্রিকেটারদের প্রশংসায় ভাসিয়ে রেখেছে হেডেন। তিনি বলেই গেছেন, ” হারিসকে দেখেছি নেটে সব বোলারকে একটা বলও রেহাই দেয়নি। এন্তার পিটিয়েছে। আর বোলারদের এমন উইকেটে মানিয়ে নিতে হয়েছে এবং কম গতিতে বোলিং করতে হয়েছে। তারা সেটাও বেশ ভালো করেছে। হারিস রউফ ধারাবাহিকভাবে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছে। শাদাব একজন দারুণ লড়াকু ক্রিকেটার , শেষ বল পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে খেলে। নিজেদের দিনে এরা অপ্রতিরোধ্য।”

সেমিফাইনাল তো হল, এবার ফাইনাল। এই ট্রফি জয়ের ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে কাকে চান, সেটাও জানিয়ে ছিলেন হেডেন, ” আমি নিজে ফাইনালে ভারতের চাই। কারণ, অনেক বেশি দর্শকের উপস্থিতি আমাদের সেরা ক্রিকেটটা দেখতে পারবে। সেটা এক স্মরণীয় ব্যাপার হয়ে উঠবে।’

বিধি বাম। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। তাঁর নিজের দেশে বিশ্বকাপের আসর বসেছে। অথচ তাঁর দেশের দলটি এবার সেমিফাইনালে উঠতেই পারেনি। তিনি সেই এক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হয়ে বিশ্বসেরা হতে চান। দল তাঁর পাকিস্তানই হোক না, ক্ষতি নেই। ইতিহাস জানবে, এই জয়ের সঙ্গে ছিল এক প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার। আর এখন ফাইনাল মানে ম্যাথুর কাছে চির শত্রু (ক্রিকেট মাঠে ) ইংল্যান্ডকে সমঝে ট্রফি জিতে নেওয়া।