লাদাখের নিষিদ্ধ গ্রাম, এখানে গোপনে বিদেশী মহিলারা আসেন গর্ভবতী হতে!

স্বাতী চ্যাটার্জিদেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম লাদাখ। লে, নুব্রা ভ্যালি, তুরতুক গ্রাম, প্যাঙ্গন লেক, সোমারিরি এই পর্যটনস্থলগুলি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সাধারণ পর্যটকেরা মূলত এই রুটেই বেশি বেড়াতে যান।

যদিও আজকের যে প্রতিবেদন যে পর্যটনকে, তা খুব একটা জনপ্রিয় নয়, ভারতেতো নয়ই। আপনারা অনেকেই নানা ধরণের পর্যটনের কথা শুনেছেন, যেমন সোলো ট্রাভেলিং, ইকো নেচার ট্যুর, হাইকিং, ট্রেকিং, ওয়াকিং ট্যুর ইত্যাদি। কিন্তু প্রেগনেন্সি ট্যুরিজম শব্দটি হয়তো অনেকের কাছে অজানা।

প্রেগনেন্সি অর্থাৎ গর্ভাবতী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়া। সেখানে থাকা এবং গর্ভবতী হলে দেশে ফিরে যাওয়া। বিষয়টি শুনে কি অবাক লাগছে? অবাক লাগলেও সত্যি, এই ভারতের বুকেই এমনই এক হট ডেস্টিনেশন হল লাদাখ।

এই কাহিনির গোড়ার কথা অবশ্য লুকিয়ে আছে দু হাজার বছর আগের ইতিহাসে। প্রায় ৩২০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ম্যসেডোনিয়া থেকে প্রাচ্য জয়ের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলেকজান্ডার। হাইডাসপাসে ভারতের রাজা পুরুর সঙ্গে যুদ্ধ হয় আলেকজান্ডারের। যুদ্ধের পর আলেকজান্ডার দেশে ফিরলেও, তার কিছু সেনা থেকে যায়। আর তাদেরই বংশধরেরা এখনও রয়েছে লাদাখের কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে।

লাদাখ অঞ্চলে, চারটি গ্রাম রয়েছে, দাহ, হানু, গারকোন, দারচিক। এই চারটি গ্রামেই বাস আর্য জাতির। ভারতে বহু বৈদেশিক আক্রমণ হয়েছে, বহু জনজাতির রক্ত মিলে মিশে গিয়েছে। কিন্তু এই চার গ্রামের আর্য জাতির এখনও খাঁটি রয়েছে।

ব্রোকপা জনজাতির পুরুষ। লাদাখ

২০১৫ সালে প্রথম একটি গুজব ওঠে, লাদাখের এই প্রত্যন্ত, দুর্গম অঞ্চলের আর্যদের গ্রামে বিদেশী মহিলারা আসতেন, প্রায় মাস দুই তিনেক থাকতেন এবং গর্ভবতী হওয়ার পর দেশে ফিরতেন। প্রশ্ন ওঠে, লাদাখ অঞ্চলে এতো জনপ্রিয় জায়গা থাকতে, এই গ্রামগুলিতেই কেন বিদেশী মহিলারা এসে দিনের পর দিন থাকতেন?

গুজবের সন্ধানে কিছু অত্যুৎসাহী সাংবাদিক গোপন তদন্ত শুরু করে। নিছকই পর্যটক সেজে গুজবের ভিত্তির সুলুকসন্ধানে নামে। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, পাকা সড়ক নেই, পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই। মৌলিক পরিষেবার কিছুই নেই। অথচ বিলাসবহুল জীবনযাপন ছেড়ে শুধু ভ্রমণের জন্য এই গ্রামে মাসের পর মাস পড়ে থাকেন মহিলারা, এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য।

আরও পড়ুন- এখনও বেঁচে আছেন অশ্বত্থামা, কোথায় দেখা যায় তাঁকে?

গোপন তদন্তে, প্রেগনেন্সি ট্যুরিজিমের কথা স্থানীয় গ্রামবাসীরা স্বীকার না করলেও, পুরনো কিছু নথি সন্দেহের জন্ম দেয়। যেমন প্রায় ৪০-৫০ বছর আগে বিদেশ থেকে বহু মহিলা এই অনামী গ্রামে এসেছেন। পুরনো ডায়েরিতে সেই সব নাম ও ঠিকানা এখনও রয়েছে। সেই সমস্ত পুরনো ডায়েরি কয়েকজন জমিয়ে রেখে দিয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন- পুতুল দ্বীপ কেন রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর

কিন্তু সেই ডায়েরি থেকে এটা প্রমাণ হয় না, যে সেই সব মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার জন্যই আসতেন। তবু প্রশ্নটা থেকে যায়। এখন ২০২২, সেভাবে সেজে ওঠেনি লাখাদের প্রত্যন্ত অঞ্চল। আর ৪০-৫০ বছর আগে এই সব অঞ্চল শুধু দুর্গমই ছিল না, ভারতীয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও অজানা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু কঠোর আইন আনা হয়। আইন মোতাবেক, ভারতের প্রেগনেন্সি ট্যুরিজম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই হয়তো, এখনও গ্রামের বাসিন্দারা পূর্বসুরীদের কর্মকাণ্ডকে স্বীকার করেন না। কারণ পুরোটাই চলতো অত্যন্ত গোপনে। এবং মোটা টাকার বিনিময়ে।

আরও পড়ুন- পাকিস্তানে কেমন আছে, গদ্দার বাঙালিরা?

লাদাখে আর্য বলে যে প্রাচীন পশ্চিমী জনজাতি রয়েছে, যাদের মধ্যে এখনও মিশ্র রক্ত প্রবাহিত হয়নি। তাদের নাম হল ব্রোকপা। এই ব্রোকপা জনজাতি সারা বিশ্বে রয়েছে চার হাজার। তার মধ্যে ১৯০০ রয়েছে ভারতের লাদাখ অঞ্চলে।