ইউ এন লাইভ নিউজ: মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার ষষ্ঠ শুনানি। মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ। গত শুনানিতে নতুন ডিউটি রুম এবং শৌচাগার নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো ইত্যাদি বসানোর কাজ কত দূর এগিয়েছে, সে নিয়ে রাজ্যকে প্রশ্ন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। শুধু তাই নয় পাশাপাশি আর জি কর কাণ্ডের পর গড়া ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের কাজ কত দূর এগোল, মঙ্গলবার সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট চাইতে পারে শীর্ষ আদালত। আদালত সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর ২টোয় মামলাটি শুনবে আদালত। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বসার পর অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই শুরু হয় আর জি কর মামলার শুনানি। টাস্ক ফোর্স নিয়ে হলফনামা জমা পড়ল সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি তদন্তের অগ্রগতি কেমন, জানতে চাইলে তার পরই সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। সেই রিপোর্ট পড়েছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টে সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে সিবিআই আধিকারিকেরা। নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘রিপোর্টে উল্লেখ আছে।’’ প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘টাস্ক ফোর্স কী করছে?’’ সলিসিটর জেনারেল জানান, তারা এ ব্যাপারে হলফনামা জমা দিয়েছেন। তা পড়ে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘৯ সেপ্টেম্বর শেষ বার টাস্ক ফোর্স বৈঠক করেছিল। তার পর আর কোনও বৈঠক করেনি?’’ তুষার জানান, তার পর কোনও বৈঠক হয়নি। এক মাসের বেশি সময় কেন কোনও বৈঠক হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। আরজি কর মামলায় প্রথম চার্জশিট জমা পড়েছে শিয়ালদহ আদালতে। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্টে সেই চার্জশিটের কথা উল্লেখ রয়েছে। এমনকি, চার্জশিটের কপিও জমা দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আদালতে সিবিআই জানায়, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর কেউ এই ধর্ষণ-খুন মামলায় জড়িত কি না, তা এখনও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ল রাজ্যের হলফনামা। আদালতে রাজ্য জানায়, আর জি কর মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তাই সেই মেডিক্যাল কলেজে কাজ করতে গেলে প্রয়োজন সিবিআইয়ের অনুমতি। তাই অনুমতি পাওয়ার পরেই কাজ শুরু করা হয়। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আরজি করের সব কাজ শেষ হবে। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ গুলিতে সিসিটিভি বসানো, শৌচালয়, রেস্টরুম ইত্যাদি কাজ কত দূর এগিয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য জমা দিয়েছে রাজ্য। সেখানে রাজ্য উল্লেখ করেছে, এই কাজের জন্য হাজার কোটির বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কাজ হয়ে গেছে। বাকি কাজ ২৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর আর জি করের কাজ শেষ হবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। রাজ্য ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তার বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যদিও তা মানতে নারাজ চিকিৎসকদের আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ইন্টিগ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ১ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। সব হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে।’’ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা কি কাজে ফিরেছেন?’’ জবাবে জুনিয়র ডাক্তারের পক্ষের আইনজীবী জানান, সকলেই কাজে ফিরেছেন। তা মানল রাজ্যও। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘হ্যাঁ, সাত জন যাঁরা অনশন করছেন, তাঁরা বাদে সকলেই কাজে ফিরেছেন।’’ মঙ্গলবারের শুনানিতে প্রশ্ন ওঠে, রাজ্য সরকারের ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে কেন সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়োগ করা হবে? সেই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ। সেখানে বলা হয়েছিল, কোনও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরত রাখতে হবে। মঙ্গলবার সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের কে নিয়োগ করে? কী ভাবে নিয়োগ হয় তাঁদের? এখন রাজ্যে কত জন সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন?’’ রাজ্য জানায়, সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়। পরের শুনানিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে যাবতীয় তথ্য চাইলেন প্রধান বিচারপতি। রাজ্যের কাছে হলফনামা চাইল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে কী ভাবে সিভিক ভলান্টিয়ারের নিয়োগ হয়? নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? নিয়োগের আগে কী ভাবে তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হয়? কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার আছে? সিভিক ভলান্টিয়ারকে কী ভাবে বেতন দেওয়া হয়, কত বাজেট বরাদ্দ করা হয় তার জন্য?’’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘রাজ্যকে হলফনামায় নিশ্চিত করতে হবে কোন স্কুল, হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা যাবে না। এমনকি, কোনও থানা এবং তদন্তের সঙ্গে জড়িত কোথায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়নি, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে।’’ সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি শেষ। দীপাবলির পর হবে পরবর্তী শুনানি।