ফিচার ডেস্ক: গ্রামীণ মহিলারা আসলে কখনোই লাইমলাইটে আসেননা। কেনই বা আসবে? পুরুষেরা সংসার চালানোর জন্য উপার্জন করে, আর সেই উপার্জনের টাকায় মহিলারা ঘরে বসে রান্না করবে। ঘরে বসে রান্না করলে একটু ঘাম পড়বে, খাটনি হবে, এটাই তো গ্রামীণ এলাকায় স্বাভাবিক। তো এই রান্না করা মহিলাদের আবার লাইমলাইটে আসা কী? বাস্তবে, আজকের সমাজে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা রাখার কোনও মানেই হয়না। পুরুষ, নারীকে সমান পদমর্যাদায় দেখা উচিত। তবে এই কথা গুলো কেন উঠছে?
১৫ই অক্টোবর সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। আন্তর্জাতিক ভাবে পালিত হয়, গ্রামীণ এলাকার নারীদের জন্য একটি দিন। প্রতি বছরের ১৫ই অক্টোবর। গ্রাম্য মহিলারা সমাজের উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়নে কতটা অবদান রাখে, তা উদযাপন করতেই এই দিন পালিত হয় গ্রামীণ মহিলাদের জন্য।
আরও পড়ুন: যেদেশে প্রতিদিন ৩০ জন আত্মহত্যা করে
কেন এই আন্তর্জাতিক গ্রামীণ মহিলা দিবসের ভাবনা?
এই দিনের ভাবনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে জাতিসংঘ(United of Nations)। জাতিসংঘই প্রথম গ্রামীণ মহিলাদের জন্য একটি দিন উদযাপনের ধারণা আনে। জাতিসংঘ, পরিবেশ ভালো রাখতে, বিশ্ব জুড়ে শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনেক কাজ করেছে। তাদের আরও এক কাজ ছিল মহিলাদের, বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের উন্নতি ও কল্যাণে নানান কর্মসূচি নেওয়া।
তখন সালটা ছিল ১৯৯৫। চিনের বেইজিংয়ে নারী বিষয়ক চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলনের সময় জাতিসংঘ নারীদের জন্য নানান ভাবনা ভেবেছিল। ওই সম্মেলনে নারীদের ক্ষমতায়ন ও সম্মানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। ১৬ই অক্টোবর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস। অনেক আলোচনার পর ঠিক হয়, কৃষি, খাদ্য উৎপাদনে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় গ্রামীণ মহিলাদের অবদান স্বীকার করতে ও প্রশংসা করতে, বিশ্ব খাদ্য দিবসের আগের দিনটি, অর্থাৎ ১৫ই অক্টোবর উৎসর্গ করা হবে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ মহিলা দিবস।
সমাজে এই দিনের প্রয়োজনীয়তা কী?
সমাজ বড়ই অদ্ভুত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার গোঁড়ামি যেন বহু বছরেও বদলায় না। গ্রামীণ সমাজে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৃষি উৎপাদনে, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য দূরীকরণে গ্রামের নারীরা পালন করছে বহুমাত্রিক ভূমিকা। তবুও, তাঁরা সম্মান পান না। আজও, বহু গ্রামে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরেও নারীরা তাদের প্রাপ্য মজুরি পাননা। ঘরে, বাইরে শিকার হতে হয় নানান বৈষম্যের। আর নারী নির্যাতনের ঘটনাতো এদেশে চিরাচরিত প্রথার মতোই চলে আসছে।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী, বেশিরভাগ নারীর বাস গ্রামে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ নারীরা দিনের মোট সময়ের শতকরা ৫৩ ভাগ ব্যয় করে কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষেত্রে। দেখা যায়, পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবদিক পরিচালনা করছেন এই নারীরাই। গ্রামের দিকে শহরের তুলনায় মিডিয়া কম। তাই সেখানকার নারীদের সমস্যা গুলোও সামনে আসতে চায় না অনেকসময়। আর এখানেই জাতিসংঘের এই ভাবনা। এখানেই আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের সার্থকতা।
Leave a Reply