নিউজ ডেস্ক: দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডে খুনি আফতাব আমিন পুনাওয়ালার হল না নার্কো টেস্ট। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নার্কো টেস্টের আগে আফতাবকে মুখোমুখি হতে হবে পলিগ্রাফ টেস্টের। মেডিক্যাল টেস্টের পরেই হবে নার্কো টেস্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্ব শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের আধিকারিকরা। পলিগ্রাফ পরীক্ষার মাধ্যমেই সত্যিটা জানা যাবে, এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। কিন্তু কীভাবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
আফতাবের পুলিশ-হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২২ নভেম্বর, মঙ্গলবার। গত ১৭ নভেম্বর দিল্লির আদালত পাঁচ দিনের মধ্যে আফতাবের নার্কো অ্যানালিসিস করাতে বলেছিল পুলিশকে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, কারও অনুমতি না নিয়ে আফতাবের নার্কো অ্যানালিসিস বা পলিগ্রাফ টেস্ট করা যাবে না।
কী এই পলিগ্রাফ পরীক্ষা?
সাধারণত বড় ধরনের অপরাধে সন্দেহভাজনকে এই পরীক্ষা করানো হয়। অনেক সময় দুঁদে অপরাধীরা পুলিশের জেরায় ইস্পাত-কঠিন স্নায়ুর পরিচয় দেয়। ঠান্ডা মাথায় তারা তদন্তকারীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। তখন তাদের মুখ থেকে সত্যিটা বের করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পুলিশের কাছে। তবে পলিগ্রাফ টেস্ট কিন্তু লাই ডিটেক্টর টেস্ট নয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিভিন্ন শারীরিক উত্তেজনা, স্নায়ুতে রাসায়নিক বিক্রিয়া ধরা পড়ে মেশিনে। টেস্ট চলাকালীন অভিযুক্তের নিজস্ব চিন্তাভাবনার সঙ্গে ওঠানামা করে পলিগ্রাফের সূচক। এই দেখেই অভিযুক্ত সত্যি বলছে না মিথ্যে বুঝতে পারে তদন্তকারীরা।
পলিগ্রাফ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় যে, প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কোনও ব্যক্তি মিথ্যা বলছে নাকি সত্য বলছে। যখন কেউ মিথ্যা বলে, তখন তার হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে। পলিগ্রাফ পরীক্ষায় সেই শারীরিক পরিবর্তনগুলি ধরা পড়ে। পলিগ্রাফ যন্ত্রে অভিযুক্তের সাধারণত চারটি বিষয়ের উপর নজর দেওয়া হয় –
- শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি
- পালস রেট
- রক্তচাপ
- কতটা ঘাম বের হচ্ছে
- দেহের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং ত্বকের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা
- কণ্ঠস্বরের বদল শরীরের নড়াচড়া এবং মাইক্রোমুভমেন্ট (কম্পন, অনিচ্ছাকৃত পেশি সংকোচন)
- চোখের তারার নড়াচড়া
মিথ্যা বলার নানা সঙ্কেত:
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও ব্যক্তি যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন তার মস্তিষ্ক থেকে পি৩০০ (P300) নামে একটি বিশেষ সংকেত বের হয়। ফলে মিথ্যেবাদীর হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, পালস রেট ওঠানামা করে। কপালে বা হাতের তালুতে ঘাম জমতে শুরু করে। এর থেকেই বোঝা যায় ওই ব্যক্তি মিথ্যা বলছে।
আরও পড়ুন: বারবার বয়ান বদল, ‘ট্রুথ সিরাম’ ইঞ্জেকশন দিয়ে আফতাবের নার্কো টেস্ট
ইস্পাত-কঠিন স্নায়ুর আফতাবের বারবার বয়ান বদল করা, একাধিক বিষয়ে ধোঁয়াশা বজায় রাখা, ঠান্ডা মাথায় তদন্তকারীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার এই ঘটনার যবনিকা পতন করার জন্যই এই পলিগ্রাফি টেস্ট! এই বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
Leave a Reply