দীপঙ্কর গুহ:
মুম্বইয়ে আরব সাগরের তীরে সাত তারা হোটেলে দুদিন আগে এক বিতর্কের আপাতত অবসান হয়েছে। বিসিসিআই এর ৯১ তম বার্ষিক সাধারণ সভা শেষ হয়েছে। বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন – সংস্থার আগের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সভা শেষেই নয়া বিতর্কে বিশ্ব ক্রিকেটে ঝড় বইছে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের ২০২৩ সালে পাকিস্তানে গিয়ে এশিয়া কাপে খেলা নাকচ করে দিয়েছেন ভারতীয় বোর্ডের সচিব জয় শাহ।
তখন থেকেই প্রতিদিন, ভারত – পাকিস্তানের তাল ঠোকাঠুকি চলছে। আর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত – পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ আরও গণগনে হয়ে উঠেছে। পাক বোর্ড থেকে সরকারি ভাবে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, এই মানসিকতা ভারত এভাবে দেখলে – তারাও ভারতে বিশ্বকাপে খেলতে নাও যেতে পারে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা হুমকিই। সত্যি করে এটা করে দেখানো পাক বোর্ডের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ একটাই : বিশাল পরিমাণের অর্থ প্রাপ্তি। আইসিসি টু্নামেন্ট খেলবে যে যে দল – সব দলকেই সমান অর্থ দেয়। পাক বোর্ডের কাছে, যা অতি প্রয়োজনীয়।
জয় শাহের এমন ঘোষণার পর, টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে সঙ্গে থাকা মিডিয়া টিমের সদস্যরা সচেতন হয়ে গেছে। মুম্বইয়ের সদর দপ্তর থেকে অস্ট্রেলিয়াতে থাকা টিমের ম্যানেজার , ডিজিটাল টিম আর ভিডিও – স্টিল ছবির ক্যামেরাম্যানদের সচেতন করা হয়েছে। কোনও ভাবে যেন এখন পাক – ভারত ক্রিকেটারদের সখ্যতা প্রকাশ পেতে পারে — এমন কিছু না প্রচার মাধ্যমে আসে। তাই বোধহয় শাহিন আফ্রিদি আর মহম্মদ শামির এক ফ্রেমে বন্দি হওয়া সেই ছবি – ভিডিওর পর, সকলে সচেতন। এখনও আর কোথাও কিছু নেই। কিন্তু ক্রিকেটারদের মধ্যে কেন সখ্যতা থাকবে না?
কিন্তু ২৩ অক্টোবর রবিবার, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত আর পাকিস্তানের ম্যাচটি আদৌ হবে তো? মুম্বইয়ে বসে অনেক খেলা চলে। আজব এক নগরী। মায়াবী। গোটা বিশ্বে এই ডুয়েল নিয়ে বাজি ধরে জেতার স্বপ্ন দেখে অনেকে। বেটিং চলে লাখ – লাখ , কোটি টাকারও। কিন্তু ম্যাচটি যদি না হয়!
একটিও বল না খেলেই বাতিল হয়ে যেতে পারে ভারত-পাক এই হাই ভোল্টেজ ম্যাচ!
এর কারণ এই মুহুর্তের দুই ক্রিকেট বোর্ডের হাই টেনশন সম্পর্ক ? নাহ্ – বিধির বিধান। মাঠে এই লড়াই স্বয়ং প্রকৃতি আপাতত চাইছে না। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া সূত্রের খবর, বৃষ্টিতে এই ম্যাচ ভেস্তে যেতে পারে।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৯০ হাজারের কাছাকাছি দর্শক ম্যাচ দেখার টিকিট কিনে বসে আছে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। কিন্তু সেই ম্যাচ নিয়েই এমন চরম আশঙ্কা! পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, “বৃষ্টির সম্ভবনা প্রবল। বিশেষ করে বিকেলের দিকে। সন্ধের সময় দক্ষিণমুখী বাতাস নাকি বয়ে যাবে ১৫-২৫ কিমি ঘন্টা বেগে।”
শুধুমাত্র ভারত-পাক মেগা ডুয়েলই নয়, একই দিনে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আছে সিডনিতে। সেই ম্যাচও বৃষ্টিতে নাকি ধুয়ে যেতে পারে।
শনিবারের দুটি ম্যাচ সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, “৯০ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষ করে বিকেল এবং সন্ধের মধ্যেই। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর-পূর্বমুখী বাতাস বইবে ১৫-২০ কিমি বেগে। সেই হাওয়া গতি সর্বোচ্চ পৌঁছতে পারে ২৫ কিমি পর্যন্ত। দিনের বাকি সময় উত্তরমুখী হাওয়া বইবে ঘন্টা প্রতি ১৫-২০ কিমি বেগে।”
পাকিস্তান ম্যাচে নামার আগে ভারতের ওয়ার্ম আপ ম্যাচ ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ব্রিসবেনে সেই ম্যাচেও এক বলও খেলা হয়নি অবিরাম বৃষ্টির জন্য। পাকিস্তান – আফগানিস্তান ম্যাচও শেষ করা যায়নি আবহাওয়া বেচাল আচরণ করায়।
আরও ম্যাচ ঘিরে সংশয়। সুপার-১২ পর্যায়ে খেলার টিকিট মেলার জন্য একটি ম্যাচে নামছে আয়ারল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবং অন্যটিতে স্কটল্যান্ড-জিম্বাবোয়ে। শুক্রবার এই দুই ম্যাচেই ৬০ শতাংশ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
এই সময় অস্ট্রেলিয়াতে বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে রিজার্ভ ডে-র ব্যবস্থা রেখেছে আইসিসি। তবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে এই পরের দিনে খেলার সুযোগ নেই । নকআউট পর্বে বৃষ্টি হানা দিলে টুর্নামেন্টের আয়োজকরা কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়, সেটাই এখন দেখার।
Leave a Reply