সোমনাথ পাঁজাঃ বছর ঘুরলেই বঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট। কার্যত উত্তরের সমস্ত লোকসভা আসনই বিজেপির দখলে। বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে মাঠে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গে চা-বলয়ের মন পেতে বড়সড় শ্রমিক সমাবেশ করলো তৃণমূল। রবিবার জলপাইগুড়ি মালবাজারে চা শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধরণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চা শ্রমিকদের জন্য একাধিক ঘোষণা করেন। কেন্দ্র সরকার বিল আনছে শ্রমিকদের ১২ ঘণ্টা করে কাজ করানোর। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, এই নিয়ম আনতে দেবে না তৃণমূল। শ্রমিকরা কাজ করবে ৮ ঘণ্টা। ওভারটাইম করলে তার জন্য আলাদা টাকা দিতে হবে।
অভিষেক বলেন, ‘চা শ্রমিকদের পাশে আছে তৃণমূল। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চা-শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা সোচ্চার হব। শ্রমিকদের স্বার্থে যতদূর যেতে হয় যাব। সিপিএম আমলে ২০১১ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৬৭ টাকা। কিন্তু, সেটা এখন বেড়ে হয়েছে ২৩২ টাকা। গত জুন মাসে ৩০ টাকা বেড়েছে। ৩ মাসের মধ্যে প্রত্যেক শ্রমিক হাতে আইডি কার্ড পাবেন। অনেকের অভিযোগ ছিল পিএফ, গ্র্যাচুইটি না পাওয়া নিয়ে।
সমাবেশে উপস্থিত শ্রমমন্ত্রীকে অভিষেক বলেন, ৬টা চা বলয়ের ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার চা শ্রমিকের সবার যেন একটা করে আইডি কার্ড তৈরি হয়। তিন মাসের মধ্যে এটা শ্রম দফতরকে সুনিশ্চিত করতে হবে। ৩১ জানুয়ারি মধ্যে প্রতিটি শ্রমিকের হাতে আইডি কার্ড পৌঁছে যাবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।’
শ্রমিকদের পিএফের টাকা ঠিক মতো জমা হচ্ছে না, এই অভিযোগ উঠছিল অনেকদিন ধরেই। অভিষেক বলেন, পিএফ-গ্রাচুইটি কেন্দ্রের বিষয়। ৩ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পিএফ দিতে হবে যদি কোনও বাগান মালিক পিএফ না দেন, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। পিএফ-গ্রাচুইটি-র সমস্যা ৩ মাসের মধ্যে না মিটলে জেলার পিএফ অফিস ঘেরাও করুন। আরও বলেন, নিশীথ প্রামাণিক, জন বার্লা মানুষের- শ্রমিকদের কথা ভাবেন না। শ্রমিকরা পিএফ- গ্র্যাচুয়েটি না পেলে ১৫ হাজার শ্রমিক গিয়ে এক এক জন বিজেপি বিধায়ক- সাংসদ-মন্ত্রী-নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করুন।
আরও পড়ুন: ইউএস ওপেন; জয়ের ট্রফির সঙ্গে আর কী পেলেন চ্যাম্পিয়ন ইগা
চা-বাগানের শ্রমিকদের বাড়ির ক্ষেত্রে জমির পাট্টা দেওয়া যায় কি না রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান অভিষেক। পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। সেই সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকারি দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও আশ্বাস দেন।
এরপরই দলের নেতাদের সতর্ক করে অভিষেক বলেন, ‘রাজ্য নেতা থেকে শুরু করে বুথ স্তরে নেতারা কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ব্যবহার করেন তাহলে তাঁর পাশে দল থাকবে না। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে’। এর পাশাপাশি দলবদলুদের কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তিনি। বলেন, ‘যাঁরা ইডি সিবিআইয়ের ভয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি’। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গাড়ি-রিসর্ট কালচার ছাড়ুন। চা-বাগানে যান। সাহায্য করুন শ্রমিকদের। মানুষের পাশে দাঁড়ান। এদিন তিনি শ্রমমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, সরকার যাতে শ্রমিকদের পরিচয়পত্র করে দেয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি দলের নেতাদের বলেন, কারও পরিচয়পত্র পেতে অসুবিধা হলে তাঁদের সাহায্য করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের ওপরে মানুষের ক্ষোভ নেই। কয়েকজন নেতার ওপরে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ভুল, নেতাদের দ্রুত শুধরে নেওয়ার বার্তা দেন অভিষেক।