Buddhadeb Bhattacharya

Buddhadeb Bhattacharya: শেষবারের মত ‘লাল সেলাম’, মৃত্যু যাত্রাতেও জড়িয়ে রইলেন লাল পতাকা

ইউ এন লাইভ নিউজ: প্রয়াত পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শেষ যাত্রায় তাঁর বয়স ছিল ৮০। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অবশেষে অবসান ঘটল ৮ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার। উচ্চশিক্ষিত যুব সমাজের ভবিষ্যতের জন্য শিল্পের গুরুত্ব বুঝেছিলেন তিনি। চেষ্টা করেছিলেন রাজ্যে নতুন শিল্প আনার। নতুন শিল্প রাজ্যে কর্মসংস্থানের জোয়ার আনবে বলেও আশাবাদী ছিলেন তিনি। কিন্তু বামফ্রন্টের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিপিএমের এই প্রবীণ নেতা। পরিবার সূত্রে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। শেষমেশ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিজের বাড়িতেই দেহ রাখেন।

একটানা ১১ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় কলেজ সময় থেকেই। একদম সম্মুখ সারিতে এসে রাজনীতি শুরু করেন ১৯৭৭ সাল থেকে। ১৯৭৭ সালে তিনি কাশিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হলেও ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের প্রফুল্ল কান্তি ঘোষের কাছে ৭৮২ ভোট পরাজিত হন। পরে ১৮৮৯ সালে তিনি তার নির্বাচনী কেন্দ্র পরিবর্তন করে যাদবপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই কেন্দ্র থেকে তিনি টানা ৫ বার জয়ী হন। ২০০০ সাল থেকে টানা ২০১১ সাল পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তিনি যাদবপুর কেন্দ্রেই তৃণমূল কংগ্রেসের মণীশ গুপ্তর কাছে পরাজিত হন। পরে তিনি সি. পি. আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সি. পি. আই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সি. পি. আই (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবশেষে শেষ বয়সে এসে ২০২২ সালে তাকে পদ্মভূষণ দেওয়া হয় কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। লাল শিবিরের এই নেতা অবশেষে জীবনের শেষযাত্রায় পদার্পন করলেন।

বাম জমানার শেষ সেনাপতি ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১১ বছর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাংলাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। বাংলার শিল্পবিরোধী তকমা মুছে ফেলে শিল্প আনার প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। এই বিশেষ ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছিল ১ মার্চ ১৯৪৪ সালে। উত্তর কলকাতার এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহর নাম ছিল কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ। যিনি ছিলেন একজন সংস্কৃত পণ্ডিত, পুরোহিত এবং একজন প্রখ্যাত লেখক। তাঁর শৈশব কাটে শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি এবং বাংলা (সম্মান) বিষয়ে বিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। আর এই কলেজে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তিনি রাজনীতি মহলে জড়িয়ে পড়তে থাকেন। এবং পরবর্তীকালে তিনি একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। পরে ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পথে হাটতে হাটতে ২০০০ সালে তিনি প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন। তারপর থেকে টানা ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই প্রয়াণের দিনে রাজনৈতিক মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে স্বরণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে বিভিন্ন দলের নেতা নেত্রীরা।