শিয়ালদহ থেকে ৪৮ কিমি দূরে কল্যাণী। কল্যাণী থেকে ম্যাজিক গাড়িতে কিছুটা গেলেই ত্রিবেণী। এখানেই রয়েছে তিন ধর্মের প্রধান স্থাপত্যগুলি। প্রকৃত অর্থেই যাকে বলে ত্রিবেণী। এখানএই রয়েছে, জাফর খান গাজীর দরগা, হংসেশ্বরী মন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, বিখ্যাত ব্যান্ডেল চার্চ, ইমামবাড়া।
ত্রিবেণীতে দেখার মত হল বেণীমাধব মন্দির। মকরসংক্রান্তিতে খুব ভিড় হয়। কথিত আছে এখানেই কোনও এক কালে নাকি গঙ্গা যমুনা আর সরস্বতী মিলে গিয়েছিল। তাই থেকেই নাম হয় ত্রিবেণী। কিন্তু ঐতিহাসিকেরা অনেক চেষ্টা করেও যমুনার কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তার বদলে রয়েছে বিদ্যাধরী নদী। সরস্বতী নাকি এখনও আছে যদিও সেটা খাল ছাড়া কিছু নয়।
শুধুই কি মন্দির! আছে মসজিদও। অসাধারণ স্থাপত্য তার। জাফর খান গাজীর মসজিদ। আয়তক্ষেত্রাকার। ইট আর পাথরের তৈরি। এই জায়গাটা ছিল আদি সপ্তগ্রামের অংশ। সাল ১২৯৮। জাফর খান গাজী সপ্তগ্রাম আক্রমণ করলেন। রক্তে লাল হয়ে উঠল মাটি।তৎকালীন হিন্দুরাজ ধর্মপালকে হত্যা করলেন গাজী। বহু মন্দির ধংস করলেন। সেই বছরই এই মসজিদটি তৈরি করেন জাফর খান গাজী। সমস্ত মন্দিরের ভাঙা অংশ দিয়ে তৈরি হল এই মসজিদ। গাজী ছিলেন দিল্লির সুলতানের সৈন্যদলের দলপতি। এই মসজিদের মূল মিরহাবের ওপর আরবি ভাষায় খোদাই করা একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়। আসল ও পুরাতন মসজিদটির দশটি গম্বুজ ছিল। ছয়টি কোনোরকমে টিঁকে আছে। শিলালিপি থেকে এও জানা যায় এই মসজিদটি কোনও এক কালে মাদ্রাসা হিসেবেও ব্যবহার হত। কথিত একটি কৃষ্ণ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর তৈরি হয় এই মসজিদ। এখানে যিনি পীর আছেন তিনি নাকি আগে সূর্য প্রণাম না করে নামাজ পড়েন না। মসজিদের মূল প্রার্থনাস্থলের প্রবেশ পথটি পাঁচখিলানযুক্ত এবং পাথর আচ্ছাদিত। ছাদহীন ভিতরের প্রার্থনাকক্ষের সুদৃশ্য অলঙ্করণ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রার্থনাকক্ষ দেখে বুঝলাম এটা শুধু মসজিদ নয়, দরগাও বটে। উঁচু রাস্তাটির পাশে সাবেকি বাতিদানগুলো পথের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। রাস্তাটি মসজিদের পাশ দিয়ে গোল করে ঘুরে গেছে। এ পথে হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়ে হুগলী নদী। ছাদহীন জাফর খাঁ গাজীর সমাধি সৌধটি ১৩১৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। শোনা যায় রাজস্থানের বাঘা মসজিদের স্থাপত্যের অনুকরণে করা। সম্ভবত পাথরগুলি আনাও হয়েছিল রাজস্থান থেকেই। সবই আগ্নেয় পাথর বা ব্যাসল্ট। বাকিটা হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসপ্রাপ্ত ইট, কাঠ আর পাথর।
Leave a Reply