সীতার তেষ্টা মেটাতে যে পাহাড়ের দিকে তীর ছুঁড়েছিলেন স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র, ঘুরে আসতে পারেন সেখানে আপনিও

ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত পুরুলিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হলো এই অযোধ্যা পাহাড়। এটি পুরুলিয়া জেলার সবচেয়ে বড় পাহাড়শ্রেণী। এটি দলমা পাহাড়ের একটি অংশ ও পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি সম্প্রসারিত অংশ। অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গটি হল গোরগাবুরু।

 

৮৫৫ মিটার উচ্চতার এই গোরগাবুরু সারা দক্ষিণবঙ্গের মধ্যেও সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ। অযোধ্যা পাহাড়ের গড় উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফিট আর পাহাড়ের মাথাটি হিলটপ হিসেবে খ্যাত। পাহাড়ের মাথাটি প্রায় সমতল। জনশ্রুতি আছে যে স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র এই পাহাড়ে এসেছিলেন। সীতার তৃষ্ণা পেলে শ্রীরামচন্দ্র তীর ছুঁড়ে পাহাড়ের বুক চিরে বের করেন জল। হিলটপের কাছে সেই জায়গাটি এখন সীতাকুন্ড নামে পরিচিত। মাটির ভেতর থেকে অবিরাম জলের ধারা এই কুন্ডয় এসে পড়ে। গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড গরমে নলকূপ ও জলের অন্যান্য উৎসগুলিতে জল না পাওয়া গেলেও এই সীতাকুণ্ডে জল পাওয়া যায়।

আদিবাসী গ্রামগুলি সবুজে ঘেরা পাহাড়ের এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে। কোথাও বা ছাড়া ছাড়া জঙ্গল কোথাও বা গহন অরণ্য। অযোধ্যা পাহাড়ে ওঠার জন্য অনেকগুলি ট্রেকিং রুট বা গ্রাম্য রাস্তা থাকলেও প্রধান প্রবেশদ্বার দুইটি। সিরকাবাদ, যেটি পুরুলিয়া শহরের দিক থেকে আসতে গেলে পরে। আর বরাভূম স্টেশনের দিক দিয়ে এলে বাঘমুন্ডি। শাল, সেগুন পলাশের বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা একে বেঁকে উঠে গেছে অযোধ্যা পাহাড়ের দিকে। দু দিকে নীল সবুজ ধূসর টিলাকে সঙ্গে করে আদিবাসী মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে পৌঁছে যেতে পারেন অযোধ্যা হিল টপে। অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশে বেশ অনেকগুলো দর্শণীয় স্থান রয়েছে।

হিলটপ থেকে এক কিলোমিটাররের মধ্যেই রয়েছে ময়ূর পাহাড়। ময়ূর পাহাড়ের উপরে রয়েছে একটি হনুমান মন্দির। ময়ূর পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অসাধারন দৃশ্য দেখা যায়। তারপর আছে সুবর্ণরেখা নদীর উপরে আপার ড্যাম ও লোয়ার ড্যাম। ড্যামে যাওয়ার রাস্তাতেই পরে মার্বেল লেক। আসলে এটি একটি পাথরের খাদান। চারপাশে ঘিরে থাকা উঁচু উঁচু পাথুরে টিলা ও তার মধ্যিখানে টলটলে জলের দৃশ্য বেশ সুন্দর। সেখান থেকে একটু এগিয়েই দেখে নিতে পারেন বামনী ফলস। এই ফলটি দেখতে গেলে পাহাড়ের বেশ কিছুটা নিচে নামতে হয়। এছাড়া আছে খয়রাবেরা লেক ও ড্যাম, ঘাটশিলা, গড়পঞ্চকোট, শুশুনিয়া, বড়ন্তি, জয়চন্ডী পাহাড়, বিরিঞ্চিনাথের মন্দির।

অযোধ্যার অরণ্যে এখনও চিতা, হায়না, জংলী কুকুর, বুনো শুয়োরের মতো বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া য়ায়। রাস্তায় হরিণ, খরগোশ, বোন মুরগি, ময়ূরও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে আদিবাসীদের চড়িদা গ্রাম, খয়রাবেরা ড্যাম, মুরগুমা ড্যাম, কুরুবুরু পাহাড়ের কোলে শান্ত গ্রাম সোনাকুপি, মাথা জঙ্গল, পাখি পাহাড়। হাওড়া স্টেশন থেকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার বা রূপসী বাংলা ট্রেন ধরে চলে আসুন পুরুলিয়া বা বরাভূম। এখান থেকে গাড়িতে এক ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন অযোধ্যা পাহাড়ে।

About Somnath Adak

Check Also

ভূস্বর্গ কাশ্মীর: অপরূপ সৌন্দর্যের এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা

শ্রীনগর, ১২ মে ২০২৪: “কাশ্মীর, পৃথিবীর স্বর্গ” – এই বাক্যটি কেবল একটি বর্ণনা নয়, বরং …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *