ইউ এন লাইভ নিউজ: সোমবার বেলা পৌনে ১১ টার সময় সুপ্রিম কোর্টে বসল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। এটি ছিল আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি। শুনানি পর্বের শুরুতেই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের একাধিক হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন আর এই কর্মবিরতির জেরে চিকিৎসকেরা তাঁদের কাজ বন্ধ রেখেছিল ফলত ২৩ জন মারা গিয়েছেন বলে জানান রাজ্যের আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সোমবার শুনানি পর্বে জানতে চান, আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে হাসপাতালের দূরত্ব কত? জবাবে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “১৫-২০ মিনিটের পথ। চাইলে আপনারা রিপোর্টের সঙ্গে চার্টটি দেখতে পারেন।” প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নির্যাতিতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা কখন যুক্ত করা হয়েছিল জানতে চাইলে জবাবে রাজ্যের তরফে বলা হয়, দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। এর পর দুপুর ২টো ৫৫মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা যুক্ত করা হয়েছিল। আদালত জেনারেল ডায়েরি কখন করা হয়েছিল জানতে চাইলে রাজ্য জানায়, জেনারেল ডায়েরিও ২টো ৫৫মিনিটেই করা হয়েছিল।
কখন তল্লাশি চলেছিল এবং তদন্তের প্রয়োজনে কখন বাজেয়াপ্ত হয়েছিল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানতে চাইলে জবাবে রাজ্য জানায়, রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আরজি করের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তকে প্রবেশ করতে এবং বেরোতে দেখা গিয়েছিল। ফলত, ভোর সাড়ে ৪টে থেকে ফুটেজ থাকার কথা। ওই ফুটেজ সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল কী না তা জানতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। জবাবে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ২৭ মিনিটের মোট চারটি ক্লিপিং দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “সকাল সাড়ে ৯টায় দেহ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে, দেহ যখন পাওয়া গিয়েছিল, তখন তা অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিল। তাঁর দেহে ক্ষতচিহ্ন ছিল। ওই সব নমুনা এমস বা অন্য কোনও ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিআই।” আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার মধ্যে সিবিআইকে ফের তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বললেন, “ওপেন কোর্টে কিছু মন্তব্য করতে চাই না। যাতে তদন্তে প্রভাব পড়ে। তদন্তের আবার স্টেটাস রিপোর্ট দিন।” তদন্তে নতুন কী কী তথ্য উঠে এল, তা নিয়ে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই। আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে আবারও অসহযোগিতার অভিযোগ জানাল কেন্দ্র। কেন্দ্রের তরফে সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে জানানো হয়, আরজি করে তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সহযোগিতা করছে না। আদালতের নির্দেশ, সোমবারই রাত ৯টার মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সিআইএসএফকে দেবে রাজ্য।
সুপ্রিম কোর্টে সোমবার আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি মন্তব্য করেন, “রাত পৌনে ১২টায় এফআইআর দায়ের হয়েছিল। গত ২৭ বছরের কর্মজীবনে আমি এমন মামলা দেখিনি।” তিনি এক জনস্বার্থ মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করছেন আদালতে। তিনি আরও বলেন, “ময়নাতদন্তের পুরো রিপোর্ট দয়া করে খতিয়ে দেখুন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উপস্থিত চিকিৎসকেরা একটি লবির।” সঠিক ভাবে ময়নাতদন্ত হয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তখন সিবিআইয়ের তরফেও জানানো হয়, ময়নাতদন্ত কখন করা হয়েছে সেই সময়ের উল্লেখ নেই। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তি, সব কিছু উল্লেখ রয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতির এজলাসে এডুলজি বলেন, “দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ১০ বার জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে। পুরোটা পরে তৈরি করা হয়নি তো? অনেক রহস্য রয়েছে।” সিবিআইয়ের তরফেও আদালতে জানানো হয়, ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে তাদের মনেও প্রশ্ন রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেটি এমসে পাঠাতে চায়। সিবিআইয়ের তরফে সোমবার গুরুতর সংশয় প্রকাশ করা হয় আদালতে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম ৫ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা ৫ দিন পরে গিয়েছি। তখন কিছু পাল্টে গিয়েছে।” এডুলজিও প্রশ্ন তোলেন, “এফআইআর দায়ের না করে কী ভাবে তদন্ত শুরু হল? এফআইআর দায়ের নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হতে পারে সেই তথ্য নষ্ট করা হয়েছে।” ফিরোজ এডুলজির আরও বক্তব্য, “বলা হচ্ছে, মৃতার পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ছিল। হাঁটু ভাঙা না হলে এটা সম্ভব নয়।” ঘটনার এক মাস পরেও মৃত্যুর সময় কেন জানা গেল না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আইনজীবীর। হাসপাতালের শৌচালয়ের সব টাইলসও বদলে ফেলা হয়েছে বলেও সোমবার আদালতে জানান এডুলজি। তাঁর দাবি, ফলে অভিযুক্তের লুমিনেল পরীক্ষা করানো হলেও কিছু পাওয়া যাবে না। প্রধান বিচারপতিও জানতে চান, মৃতদেহ কখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তার চালান কোথায়, সে নিয়েও প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। প্রধান বিচারপতি সোমবার রাজ্যের উদ্দেশে আরও বলেন, “হাসপাতালে কত বরাদ্দ করা হয়েছে, তা জানতে চাই না। ওই হাসপাতালে কী করা হয়েছে, সেটি জানতে চাই।” হাসপাতালে কী কাজ হয়েছে, সে বিষয়ে পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, “মেডিক্যাল কলেজের মাথায় ডিস্ট্রিক কালেক্টরদের নিয়োগ করুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে আমাদের জানান।”
রাজ্যের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রসঙ্গে আদালতে বলা হয়, “২৩ জন মারা গিয়েছেন। ৬০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁরা কাজে ফিরছেন না। এই আদালত গত শুনানিতে কাজ শুরু করতে বলেছিল। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই যে কোনও জায়গায় প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ৪১ জন পুলিশকর্মী আহত। এক জন পুলিশের চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়ে দিয়েছেন, চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়া উচিত। তাঁর মন্তব্য, “তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ হবে না, আমরা তো বলেছি। ওই ডাক্তারেরা কাজে যোগ না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করলে আমরা বাধা দিতে পারব না।” প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, আগামিকালের মধ্যে ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা জেনে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে।
Leave a Reply